‘জরুরি অবস্থায় নেওয়া ব্যবসায়ীদের টাকা এখনই ফেরত দেবে না সরকার’
হাসান আরিফ: বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে আদায় করা টাকা ফেরত দিতে আপিল বিভাগের আবেদন খারিজ হলেও এখনই টাকা ফেরত দিবে না সরকার। আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার পর পুনরায় বিবেচনার জন্য আবেদন করবে সরকার। তবে এই টাকা ফেরত দিতে হলে অবশ্যই বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। কিন্তু আগামী বাজেটে টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ রাখবে না সরকার।
এই বিষয়ে কথা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে এখনও কিছু ভাবা হয়নি। আদালতের রায় পাওয়ার পর এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কি প্রক্রিয়ায় টাকা নেওয়া হয়েছিল আর কি প্রক্রিয়ায় তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে তাও বিবেচনায় নেওয়া হবে। এরপর টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আপিল বিভাগ যেহেতু রায় দিয়েছে তাই টাকাত দিতেই হবে। তবে এখনই টাকা দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে কোনো ভাবনা নেই বলেও তিনি জানান।
অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, টাকা ফেরত দেওয়া বিষয়ে এখন কিছু ভাবা হচ্ছে না। রায়ের কপি পাওয়ার পর রিভিউ করা হবে। এর বাইরে অন্য কিছু ভাবা হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত দিতে হলে অবশ্যই বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। এজন্য বাজেটে টাকা ফেরত সংক্রান্ত আলাদা একটা খাত তৈরি করতে হবে। ওই খাত থেকেই এই টাকা ফেরত দিতে হবে। তবে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। ফলে রিভিউর রায় ব্যবসায়ীদের পক্ষে গেলেও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য ব্যবসায়ীদের অপেক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ্য, ব্যাপক দমন-পীড়ন, গ্রেফতার ও নির্যাতনের মাধ্যমে মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১২৩২ কোটি টাকা আদায় করা হয়। এরমধ্যে হাইকোর্টে ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ৬১৫ কোটি ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন হরা হয়েছিল। এই টাকা ফেরত দিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট। এই রায়ের ফলে অন্য ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। জোর-জুলুম করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যাবে না। আর টাকা ফেরতে আদালত যে রায় দিয়েছে, তার ওপর সবার আস্থা রাখা উচিত। এফবিসিসিআই টাকা ফেরতে রায়ের বাস্তবায়ন চায়।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তৎকালীন টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্টস (টিএফআই) কর্মকর্তারা প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১২৩২ কোটি আদায় করে। এ টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসাবে জমা হয়। শুধু টাকা আদায়ই নয়, অনেক ব্যবসায়ী তখন জেলও খাটেন। সম্পাদনা : শিমুল মাহমুদ