আহত ২ র্যাব সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফতরে প্রথম জঙ্গি হামলা আশকোনায় র্যাবের ক্যাম্পে আত্মঘাতী বোমা হামলা, হামলাকারী নিহত
সুজন কৈরী ও এ এইচ এম দেলোয়ার: রাজধানীর আশকোনায় হাজি ক্যাম্প সংলগ্ন র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন হামলাকারী। এ ঘটনায় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেন- ল্যান্স করপোরাল মিজানুর রহমান ও কনস্টেবল মো. আরিফ। তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত। চট্টগ্রামের সীতাকু-ের দুটি জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে চারজন নিহতের ঘটনার একদিন পরই ঘটনাটি ঘটে।
গতকাল বেলা একটার দিকে অজ্ঞাত পরিচয়ের আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক যুবক এই হামলা চালিয়েছে। কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফতরের ভেতরে এই প্রথম কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলো। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকা ঘিরে ফেলে। র্যাব-পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশি চালায়। এ সময় নিহত যুবকের হাতের সঙ্গে স্কচটেপ দিয়ে বাঁধা অবস্থায় আরো একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। পরে তা নিষ্ক্রিয় করে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। এছাড়াও হামলাকারীর কাছ থেকে একটি কালো রঙয়ের ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ব্যাগের ভেতরে কি আছে তা জানা যায়নি। গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ ও পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। ঘটনাস্থলে ১৫ মিনিট অবস্থানের পর তারা বের হয়ে যান। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তারা।
র্যাবের ধারণা, আত্মঘাতী ওই জঙ্গির শরীরে সুইসাইডাল ভেস্ট বাঁধা ছিল। সে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। তবে কোন সংগঠনের তা জানতে পারেনি র্যাব। ঠিক সময়ে ওই যুবককে প্রতিরোধ করা না গেলে ক্যাম্পের ভেতরে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারত সে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, আশকোনার হজক্যাম্পের পাশেই অবস্থিত র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পের নির্মাণ কাজ চলছে। এখানে র্যাব প্রশাসনের কিছু লোকজন আর কিছু নির্মাণশ্রমিক থাকেন। ক্যাম্পের একটি মাত্র গেট। চারদিকে গ্রিল ও দেয়াল দিয়ে বাউন্ডারি দেওয়া। এখানে যারা থাকেন, বাউন্ডারি সংলগ্ন জায়গায় তাদের জন্য কাপড় ধোয়া ও গোসলের ব্যবস্থা করা আছে। দুপুর একটার দিকে একজন অপরিচিত যুবক বাউন্ডারির নিচ দিয়ে ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকে যায়। র্যাব সদস্যদের থেকে ওই যুবক মাত্র ১০-১৫ গজ দূরত্বে ছিল। পরে তার কাছে ভেতরে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে পালিয়ে যেতে চায় এবং কিছুদূর গিয়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তিনি বলেন, তার কোনো পরিচয় বা সে কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য, তা জানা যায়নি। তার সঙ্গে কোনো লিফলেটও পাওয়া যায়নি। তার পরণে কালো পাঞ্জাবি ও মাথায় ক্যাপ পরা ছিল। তিনি জানান, এ ঘটনায় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মুফতি মাহমুদ জানান, যে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়েছে সেটি যুবকের বুকে লাগানো ছিল। তবে হাতে স্কচটেপ দিয়ে একটি বোমা বাঁধা ছিল। সেটি অবিস্ফোরিত থেকে যায়। আমাদের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট তার হাত থেকে বোমাটি সরিয়ে নিষ্ক্রিয় করে। এর আগে মাইকিং করে জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। ঘটনার সময় র্যাব ক্যাম্পের পাশের একটি মসজিদে থাকা আসাদুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি জানান, ঘটনার সময় তিনি মসজিদে ছিলেন। তখন আনুমানিক দুপুর ১টা বাজে। হঠাৎই বিকট শব্দ শুনতে পান তিনি। পরে এসে এলাকাটি র্যাব সদস্যদের ঘিরে ফেলতে দেখেন। মামুনুর রহমান নামের আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনাস্থলের কাছেই তার বাসা। তিনি হজ ক্যাম্পের মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য যাচ্ছিলেন। আনুমানিক দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে ক্যাম্পের কাছাকাছি যাওয়ার পরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান তিনি। এ সময় পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। হঠাৎ করে প্রচ- শব্দে আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় চলাচলরত পথচারী, মুসল্লিসহ সবাই এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন। তিনিও দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিন্নভিন্ন একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। বিমানবন্দর থানার ওসি নুর-ই-আজম বলেন, নিহত হামলাকারীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। সম্পাদনা: এনামুল হক