জঙ্গিরা নাজুক অবস্থায় থাকলেও নির্মূল হয়নি
আবু সাইদ খান
দেশে এখন জঙ্গি গোষ্ঠী অনেক বেশি তৎপর বা শক্তিশালী অবস্থায় আছে বলে মনে করি না। বরং জঙ্গিদের যেসব আস্তানা, যে শক্তিশালী অবস্থান ছিল এতদিন পুলিশ তা তছনছ করে দিয়েছে। জঙ্গিরা এখন নাজুক অবস্থায় থাকলেও নির্মূল হয়নি। তারা বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। বর্তমানে নারী জঙ্গিও দেখা যাচ্ছে। নারীদেরও এখন জঙ্গিপনা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যাতে সহজে তাদের একস্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়া, অস্ত্র পরিবহন ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করছে।
জঙ্গি তো জঙ্গিই। নারী বা পুরুষ বলে আলাদা করার কিছু নেই। তারা একই দীক্ষায় দীক্ষিত। একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী। আমাদের সমাজে হিন্দু এলাকা বলে আলাদা কোনো অবস্থান নেই। কেননা এখানে সবাই মিশ্রিত সমাজ। এখানে হিন্দু-মুসলমান মিলে মিশে আছে। বসবাস করে। জঙ্গিরা বিভিন্ন জায়গা বা এলাকায় অবস্থান করছে। যেখানে তারা সুবিধা পাচ্ছে সেখানেই অবস্থান গ্রহণ করছে। তবে জঙ্গিরা এখন কোথাও, কোনো বাড়িতেই আশ্রয় পাচ্ছে না। কোথাও গিয়েও তারা স্বস্তি পাচ্ছে না। ধরা পড়ছে। পরিচয় মিলছে। তখন মা-বাবার পক্ষ থেকেও কোনো সহানুভূতি পাচ্ছে না। আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে না। যে কারণে জঙ্গিরা এখন বাসা ভাড়া করে গোপনে থাকছে। এটা হলো আমাদের সামাজিক একটা ডেভেলপমেন্ট। জনগণের পক্ষ থেকে সচেতনতা বেড়েছে। যার কারণে জনগণ জঙ্গিদের খবর র্যাব-পুলিশের কাছে দিয়ে দিচ্ছে।
যে সব জঙ্গি নিহত হচ্ছে তাদের আত্মীয়-স্বজনও বা বাবা-মাও তার লাশ গ্রহণ করছে না। জঙ্গিবিরোধী জনমত সমাজে গড়ে উঠেছে বলে আমি মনে করি। জঙ্গি নির্মূল কেবলমাত্র র্যাব, পুলিশ দিয়ে সম্ভব না। এটাকে মোকাবিলা করতে হলে আমাদের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু এই কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে না। এটাতে তেমন জোর দেওয়া হচ্ছে না। বরং উল্টোটা হচ্ছে। যেমন আমরা লক্ষ্য করি, জঙ্গিবাদের দর্শন তো মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা। আমাদের শিক্ষাকার্যক্রমে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার প্রবেশ ঘটছে। হেফাজতের হুমকিতে, হেফাজতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। জামায়াতকে মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার হেফাজতের সঙ্গে আপোস করছে। হেফাজতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নারী নীতির পরিবর্তন করেছে। শিক্ষা, পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। তার ফলে হেফাজতের ঔদ্ধত্য এত বেড়ে গেছে যে তারা এখন ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলনও শুরু করতে চাচ্ছে। এ সব কিছুই হচ্ছে অপোসনীতির কারণে। এই আপোসনীতি পরিহার করতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, হেফাজতের সঙ্গে আপোস করে কখনোই ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সরকারের এই ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। নীতি-নির্ধারকদের ভাবতে হবেÑ হেফাজতকে ছাড় দিলে, আসকারা দিলে তাদের বংশবিস্তারই ঘটবে। যা ভবিষ্যতে সবার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতে জঙ্গি নির্মূলে সরকারের সঙ্গে এখানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান