হঠাৎ উগ্রতা ঠেকাতে হলে
অজয় দাশগুপ্ত
হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশ। জাতির জনকের জন্মদিনে রাজনীতি ও সরকার যখন ব্যস্ত তখন র্যাবের ওপর আক্রমণের ভিতর দিয়ে নিজেদের অপঅস্তিত্ব আবারও প্রমাণ করেছে জঙ্গিরা। এই জঙ্গিবাদ এমনই। ঘাপটি মেরে থাকে। সময় ও সুযোগ বুঝে নিজের আসল চেহারা নিয়ে হাজির হয়। দুনিয়ার নয়া আপদ এই জঙ্গির সঙ্গে ধর্মের নাম জড়িয়ে থাকায় সাধারণ মানুষের এক বিশাল অংশ এ নিয়ে দ্বন্দ্বে ভোগেন। তাদের কাছে এদের সুস্পষ্ট চেহারা বা ভীতিজাগানিয়া কর্মকা- এখনো ধোঁয়াশা। এদের বোঝানো হয়েছে জঙ্গিরা মূলত সারাবিশ্বে মুসলমানদের ওপর অনাচার বা অত্যাচারের কারণে এসব কাজ করে থাকে। দুনিয়ার বদলে যাওয়া সময়ে এই অভিযোগ অস্বীকার করা চলে না। কিন্তু বাংলাদেশের মতো মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কে কাকে সংখ্যাগুরুদের ওপর অত্যাচার করবে? এখানে যেসব অনাচার বা নিপীড়ন হত্যা বা মারামারি তার পেছনে আছে মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। এমনকি সামাজিক হিংসা, ধনদৌলত, নারী, জমি কিংবা পাওয়ার গেমকেও নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনীতি। তাহলে প্রশ্ন জাগতেই পারে এই জঙ্গিরা আসলে কাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
আমাদের দেশের জঙ্গি নামে পরিচিত বিপথগামী তারুণ্যকে বাগে আনতে হলে উস্কানির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এ লেখা যখন লিখছি আইনজীবী তুহিন মালিকের বক্তব্যে তখন সারাদেশে বিতর্ক আর আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। নিজের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের পরিবর্তে অন্যের ধর্ম ও তাদের বিশ্বাসকে আঘাত করার ভিতর আর যাই থাক শান্তি থাকে না। এ জাতীয় বক্তব্য সমাজে বিরাজমান সম্প্রীতি আর সমঝোতার জন্য বিপজ্জনক। এ জন্যে মানুষ আইন বানায় শাস্তি নিশ্চিত করে। অথচ আমাদের সমাজে রসরাজ আর তুহিন মালিকের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা। প্রসঙ্গটা টানলাম এই কারণে যেকোনো জায়গায় একটু ফাঁক থাকলেই পানি ঢুকবে। আর তা যদি রোধ করা না যায় একসময় তা ঘর ভাসিয়ে দেশ ডুবিয়ে ফেলতেও কসুর করবে না।
দেশের সামাজিক পরিবেশ আর জীবনযাপনের ভিতর মৌলবাদের সাপ জিইয়ে কোনোভাবেই তাদের দমন করা যাবে না। ওই যে বললাম মানুষ আসলে এইসব জঙ্গি বিষয়ে না পুরোটা জানে, না বোঝে। ধনীরা মনে করে এটা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ফল। মধ্যবিত্ত ও সুবিধাবাদীরা মনে করে আওয়ামী লীগ শাসনে থাকার জন্য এসব করে, এগুলো নাটক। সুশীল নামের আপদেরা বলে এগুলো ক্রিয়েটেড। মানবাধিকারের লোকেরা বুঝে শুনে কাঁদেন। তাদের চোখের পানি সবার জন্য পড়ে না। জঙ্গি নামের কারও জন্য পড়লেও মাথা থেতলে পড়ে থাকা নিরাপত্তাবাহিনীর লোকদের জন্য মানবাধিকার নীরব। বিএনপি মনে করে এ হচ্ছে তারা শাসনে না থাকার রেজাল্ট। আর হিন্দু বা সংখ্যালঘুরা জানে এগুলোর আখেরি ফলাফল তাদের মার খাওয়া।
এমন সমাজে আপনি এগুলো ঠেকাবেন কি করে? একমাত্র প্রধানমন্ত্রীকেই দেখি আন্তরিক। মানুষ যদি সমস্যা সচেতন না হয়, তারা যদি বুঝতে না পারে, প্রতিরোধ না গড়ে এর সমাধান মিলতে পারে না। কিছুদিন চুপ থাকার পর যারা লেলিয়ে দেওয়ার তারা লেলিয়ে দেবে আর যারা ঠেকানোর তারা ঠেকাতে থাকবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য গড়তে হলে ধর্ম-অধর্ম সম্প্রদায় রাজনীতি ও ভেদাভেদের চশমা খুলে খালি চোখে তাকাতে হবে। সেটা কি পারবে আমাদের এই দীর্ণ সমাজ? অথচ দেশ এগোতে শান্তির কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান