পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে সরকারি বাসা পাচ্ছে না পৌনে দু’লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী
ফারুক আলম : রাজধানীতে সরকারি বাসা বরাদ্দের জন্য প্রতিদিন আবাসন পরিদপ্তরে শত শত আবেদন জমা পড়ছে। নিয়মানুযায়ী একজন সরকারি কর্মচারী যার নামে বাসা বরাদ্দ আছে তিনি ঢাকার বাইরে বদলি হলে দুই মাসের মধ্যে বাসা ছাড়বেন। কিন্তু দেখা যায়, কেউ কেউ এক বছরেও বাসা ছাড়ছেন না। অনেকে বাসা রক্ষার্থে আদালতে মামলাও করছেন। এ সংশ্লিষ্ট মামলার সংখ্যা শতাধিক। আবার একই বাসার জন্য একাধিক আবেদন জমা পড়ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্য মতে, রাজধানীতে সরকারি চাকরীজীবীর সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজারের মতো। যে আবাসন সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে, তাতে মাত্র ৭ শতাংশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। বাকি ৯৩ শতাংশের আবাসনের ব্যবস্থা নিজেদের করতে হয়। এ অবস্থায় তাদের আবাসন সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এরপরও এ আবাসন সুবিধার বাইরে থেকে যাবেন বিপুল সংখ্যক সরকারি চাকরিজীবী। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আবাসন পরিচালক) এমদাদুল হক আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, রাজধানীতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ১ লাখ ৬৫ হাজার। আর তাদের জন্য সরকারি বাসা মাত্র ৫ হাজারের মতো। এর বাইরে এ, বি ও সি ক্যাটাগারির যেসব বাসা বরাদ্দ দেয়া হয় তা স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। অর্থাৎ বর্তমানে ৯৩% শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাসা পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার আজিমপুরে সরকারি কলোনিতে বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণের একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ছয়টি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনে মোট ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১ হাজার ১০৪টি। এরমধ্যে ২টি বিল্ডিংয়ের ৭০% কাজ শেষ। আর বাকি ৪টির ৬০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচারাল কাজ শেষ। এখন গাথুনি ও প্লাস্টারের কাজ চলছে। ২০১৮ জুন নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে জানান দায়িত্বরত প্রজেক্ট ম্যানেজার। এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান (পরিকল্পনা অধিশাখা) সাজ্জাদুল ইসলাম আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের ক্রমান্বয়ে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে ৯টি প্রকল্পের আওতায় রাজধানীতে ৪ হাজার ২শ ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ চলছে। বিভিন্ন মেয়াদে ২০১৮ ও ২০১৯ সাল নাগাত এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এই ৯টি প্রকল্পের অধীনে ২০ তলা বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
উল্লেখ রাজধানীতে সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সংকট দূর করতে দুই হাজার ৮০০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ৯টি প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ২শ ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। এর মধ্যে ৪টি প্রকল্পের কাজ ’২০১৮ সালে জুন নাগাত শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আর বাকি ৫টি প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের জুনে শেষ হবে। প্রত্যেকটি ভবন ২০ তলা করা হবে। সূত্র মতে, দিন দিন সরকারি চাকরিজীবীদের সংখ্যা বাড়ছে সেই তুলনায় আবাসন নির্মাণ হচ্ছে না। সরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাকরিজীবীদের তুলনায় আবাসন সুবিধার পরিমাণ খুবই নগণ্য। আবার ক্ষেত্র ও স্থানবিশেষে সরকারি চাকরিজীবীদের বাড়ি ভাড়া হিসেবে দেয়া ভাতার পরিমাণ বাস্তব ভাড়ার তুলনায় অনেক কম। মধ্যম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের অনেকেই সরকারের নির্ধারিত অংকের চেয়েও বেশি বাড়ি ভাড়া দিয়ে সন্তান ও পরিবার নিয়ে শহরে বাস করছেন। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও দেয়া সরকারি আবাসন সুবিধা উল্লেখযোগ্য নয়। সম্পাদনা: এনামুল হক