একসময়ের খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র এখন মরা খাল
মাহমুদুল হাসান রতন, ময়মনসিংহ : ব্রহ্মপুত্রের উত্তাল তরঙ্গ আজ আর নেই, নেই ব্রহ্মপুত্রের সেই রূপ। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে তার যৌবন। বিগত শত বছরেরও ডেজিং না করানোর কারণে স্মরনকালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। সারা দেশের নদ, নদীর তুলনায় ব্রহ্মপুত্র যেন একটু আগেই কালের বিবর্তনে হারাতে বসেছে ।
একসময় এই নদীর বুকেই ভেসে গিয়েছে বড় বড় বাণিজ্যিক জাহাজ। নদীর পাড়ে মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে গান, কবিতা, উপন্যাস ও চলচ্চিত্র। উত্তাল ব্রহ্মপুত্র নদ হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির অতলে। ভয়াবহ নাব্যতা সংকট ব্রহ্মপুত্রকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। নদের অববাহিকায় পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদ, সেচ সংকটে নেমে এসেছে ভয়াবহ স্থবিরতা। নদের তলদেশে পানি না থাকায় সেচনির্ভর কৃষকরা পড়েছে মহাসংকটে। নদ এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত শত বছরেও কোনো ড্রেজিং না করায় এর তলদেশে পলি জমে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে এক সময়ের উত্তাল নদ মরতে বসেছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্য সম্পদ ও নানা জলজপ্রাণি। কয়েক হাজার জেলে বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী দুই পাশে কয়েক লাখ হেক্টর জমি, এ নদের পানির সেচ ব্যবস্থা নির্ভর ছিল। বর্তমানে মূল নদে পানি না থাকায় সেচ ব্যবস্থা গভীর সংকটের মুখে পড়েছে। নদীর পানিতে যেসব গরিব কৃষক স্বল্প খরচে সেচ ব্যবস্থার আওতায় ছিলেন তাদের এখন মাথায় হাত। বিত্তবান কৃষকরা গভীর নলকূপ বসিয়ে সেচ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
যারা নগদ টাকা দিতে পারছেন তারাই শুধু পানি পাচ্ছেন। এ সুযোগে এক শ্রেণির মহাজন চড়া সুদে হাতিয়ে নিচ্ছে কৃষকের কষ্টার্জিত ফসলের টাকা। মটখলা টোক থেকে হোসেনপুর, গফরগাঁও ও ময়মনসিংহ জামালপুর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ এখন প্রায় বিলীন হতে চলেছে। পানির প্রবাহ না থাকায় নদের তলদেশে চলছে চাষাবাদ। এ সুযোগে অসাধু সরকারি কর্মকর্তাকে কৌশলে ম্যানেজ করে বিশেষ প্রভাবশালী মহল কোটি কোটি টাকার বালু ও মাটি অবৈধভাবে বাণিজ্য করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। ফলে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিরাট অঙ্কের রাজস্ব অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজ কালভার্ট। নাব্য সংকটের কারণে শুকনো মৌসুমে নৌকা চলাচলসহ পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্ থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর প্রভাব পড়েছে। জানা যায়, তৎকালীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নৌবহর নিয়ে হোসেনপুর এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতেন। এ ছাড়াও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নৌবহর ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নিয়মিত টহল ও রসদ সরবরাহের নিরাপদ পথ ময়মনসিংহ বর্তমান ব্রহ্মপুত্র নদের এ অবস্থা নিয়ে স্বর্গরুপী ময়মনসিংহ নামে ফেসবুক পেজে লিখেছে-‘সমগ্র বাংলাদেশের ২টি পুরুষ নদের মদ্ধে আমাদের ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদ অন্যতম। একসময়ের সারা দেশ বিখ্যাত এই নদ দাপিয়ে চলেছে তার আপন পথে। কিন্ত বর্তমানে এই কি হাল আমাদের নদের? বসন্তকালে পানি শূন্য হয়ে আছে। নদের প্রায় অর্ধেক শুকিয়ে গিয়েছে। আর বাকি অর্ধেক পানি কোমর সমান পানি বলা যায়।