খাবারের সমস্যা না থাকলেও রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই
গুলশান চেক পোস্ট থেকে নেমে নৌকায় করে যখন কড়াইল বস্তির মধ্যে পৌঁছালাম, ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর ১২টা ২৭ মিনিট। ঘাট থেকে একটু এগিয়ে গেলেই চোখের সামনে যেটা পড়লো তা দেখে যে কেউ বলবে এটা একটা পোড়া মৃত্যু নগরী। যেদিক দিয়ে প্রবেশ করেছি সেটা এই বস্তিবাসীর ঈদ মার্কেট ছিল, ছিল জামা, জুতা, কসমেটিকসহ মাছ তরকারি বাজার। এই মার্কেটের আটটি চালের দোকান, ১০-১২টি শাড়িকাপড় দোকান, ছোটবড় মোবাইল ক্রয়-বিক্রয় ও মেরামতের ১৫-২০টি দোকান, ছিল মুদি দোকান, চালের একটি দোকানের দিকে চোখ আটকে গেল। মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ডান পাশের অর্ধেকের বেশি দোকান চাল দিয়ে গড়ে উঠেছে পাহাড়ের স্তূপ অংশ আগুনের উওাপ ও আগুনে চাল ভাজা হয়ে আছে। পুরোটা এলাকা জুড়ে চোখে শুধু পোড়া লেপ তোষক আর আসবাবপত্রের কঙ্কাল। আর সব কিছু আগুনের কাছে বলি দেওয়া শূন্য জীবন হাতে নেওয়া মানুষগুলো। জানা যায়, সেখানে টিন দিয়ে একতলা, দ্বিতলা এমনকি তিনতলা ঘরও ছিল এক হাজারের মতো। আনুমানিক এক শতাংশ জায়গায় দুইপাশ মিলিয়ে মোট ৩০টি করে ঘর। স্থানীয় এক ক্ষতিগ্রস্ত পুরুষ জানায়, একেকটি ঘরে নারী পুরুষ সন্তানসহ চার থেকে পাঁচজন লোক থাকতো। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন খোলা আকাশের নিচে দুদিন ধরে রাত কাটাচ্ছে। বস্তি ঘুরে দেখা গেল, বয়স্ক এক মহিলা বিলাপ করছে,তার কাছে যেতেই শুনতে পেলাম তার সব হারানো কথা, ‘জীবনটায় বড় যুদ্ধ করলাম মা, তয় জীবন যুদ্ধে যা গড়িনু সবই আবার আগুন কারি নিলু। ঘর তুইলছিনু স্বামী ছেড়ে যাবার পর ছেলেপুলে নিয়ে এই বস্তির সগইলকে আতœীয় মেনে এখানে মিলিমিশি থাকছিলাম আগুন সব কাড়ি নিল’ বলেই বিলাপ শুরু করলেন ৫৫ বছরের আমেনা বেগম।
আগুন কখন কিভাবে লেগেছে আমেনা বেগম জানে না, আনুমানিক তিনটার সময় লোকজনের চিৎকার শুনে দুতলা ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা খুললে দেখে নিচতলা থেকে তার দরজা পর্যন্ত আগুনের লেলিহান শিখা। ভয়ে চিৎকার করলে উত্তর দিকের আরেক মালিকের টিনের ঘর কেটে তাকে উদ্ধার করা হয় কিন্তু তিনি তখন অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর কি হয়েছে আর বলতে পারে না। এর মধ্যেই মাইকে শুনতে পেলাম দুপুরের খাবারের জন্য সবাইকে এরশাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে বলা হচ্ছে, তখন তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এখানে সাহায্যের জন্য ২৬ সংস্থার কথা শুনলেও তারা কাজ করতে দেখেছে নয়টি বেসরকারি এনজিওদের। এর মধ্যে ঘটনার পরেরদিন সকালেই মেয়র এসে সবার প্রতিদিনের ১৬ মণ চালে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা ও জাগো ফাউন্ডেশন রাতে ও দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করেছে। তবে রাতে খোলা আকাশই তাদের মাথার উপর ছাদ হয়ে আছে, শেষ রাতের বৃষ্টিতে তারা প্রায় সবাই ভিজেছে গত শুক্রবার রাতে। রাতে যতদিন তাদের হিসাবের কাজ শেষ না হয় সাময়িকভাবে কিছু তাঁবু দিলে তারা রাতটাও ধৈর্য ধরে কাটিয়ে দিত বলছিলেন ফজলু মিয়া। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুফুজুর রহমান বলেন, ঘটনার রাত থেকেই আমাদের এ ওয়ার্ডের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াই। তিনটি মসজিদের কমিটি মিলে সাড়ে পাঁচ হাজার গ্লাস ও খাবার প্লেট দিয়েছে। তিনি সবাইকে সাহয্যের হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান। সম্পাদনা: এনামুল হক