মৃত্যুর আগে যে-মুভিগুলো দেখবেন
কামরুল আহসান : ইউরোপ-আমেরিকায় এক সময় ক্যাটালগ পাওয়া যেত, মৃত্যুর আগে যে-সব মুভিগুলো দেখবেন। সেখানে একশো বা এক হাজার মুভির একটা লিস্ট থাকতো। থাকতো সাথে ছোট ছোট রিভিউ। এখনো সেসব বই আছে। তবে, এখন আর সেইসব বই কে কিনে? গুগোলে সার্চ করলেই এরকম অসংখ্য লিস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। কী ধরণের, কোন দেশি মুভি আপনি দেখবেন? শুধু একবার সার্চ করুন গুগোলে। লিখুন সেরা দশটি রোমান্টিক ছবি। দেখবেন চার্ট চলে আসছে। লিখুন সেরা দশটি থ্রিলার মুভি। অথবা লিখুন সর্বকালের সেরা একশোটি ছবি । অথবা এক হাজার ছবি। লিস্ট চলে আসবে। লিস্ট ধরে ধরে দেখুন সের ছবিগুলো। আর জানুন পৃথিবীর চলচ্চিত্রের ইতিহাস।
চলচ্চিত্রের ইতিহাস একশো বছরের কিছুটা বেশি। এই একশো বছরে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য অসাধারণ সব মুভি। প্রতি বছর পৃথিবীতে নির্মিত হচ্ছে হাজার হাজার ছবি। সেদিক থেকে মৃত্যুর আগে আপনি কী কী ছবি দেখবেন সেই সিদ্ধান্ত নেয়াটা একটু কঠিনই।
আপনি কী ধরনের মুভি পছন্দ করেন তার উপর নির্ভর করে আপনার শ্রেষ্ঠ ছবির তালিকা। থ্রিলার, রোমান্টিক, সামাজিক, এ্যাকশন, ক্ল্যাসিক যা আপনি পছন্দ করেন গুগোলে সার্চ দিয়ে সেরকম তালিকা খুঁজে নিয়ে ইউটিউব অথবা টরেন্টোতে সেসব ছবি দেখে নিতে পারেন। এখন বিখ্যাত অনেক ছবিই নেটে পাওয়া যায়।
কিন্তু, কথা হচ্ছে মৃত্যুর আগে আপনাকে এই ছবিগুলো দেখতে হবে কেন? তাহলে প্রথমেই দেখতে হবে বার্গম্যানের সেভেন সীল। সে ছবিতে আছে মৃত্যু সাথে দাবা খেলার এক অপূর্ব গল্প। আমরা তো সারাজীবন এক অর্থে মৃত্যুর সাথেই দাবা খেলি। মৃত্যুই আমাদের সমস্ত আতংক, ভয়, ভালোবাসার জন্ম দেয়। তাই মৃত্যুকে ভুলে থাকতেই আমরা মুখোমুখি হই শিল্পের। আর চলচ্চিত্র সেই মহত্তম শিল্প যা আর সমস্ত শিল্পকে গিলে খেয়ে নিজেই একা হয়ে উঠেছে মহিমান্বিত। চলচ্চিত্র আমাদের জীবনকে জীবনের চেয়ে মহৎ করে তোলে। তাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মুভিগুলো অবশ্যই আমাদের মৃত্যুর আগে দেখা উচিত।
খুব হেলাফেলা করে দেখলেও আপনি নিশ্চয়ই টাইটানিক দেখেছেন। আপনার বয়স যদি একটু বেশি হয় তাহলে নিশ্চয়ই দেখেছেন উত্তম-সুচিত্রার ছবিগুলো। বয়সে একটু তরুণ হলে আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন টোয়েলাইট কিংবা থ্রি ইডিয়েটস, পিকে। একটু ক্ল্যাসিক ছবির প্রেমিক হলে আপনি নিশ্চয়ই এখনো না দেখে বসে নেই রোমান হলিডে কিংবা সত্যজিত রায়ের ছবিগুলো। ইরানে নির্মিত আব্বাস কিওরোস্তামি, মাজিদ মাজিদির ছবিগুলো আপনি নিশ্চয়ই এখনো না দেখে বসে নেই। অনেকেই ভালো ছবি দেখতে চায়। কিন্তু না পেয়ে না জেনে হাতের কাছে বাজে ছবিগুলোই দেখতে থাকে। তাই এরকম একটা লিস্টি তৈরি করে নেয়া ভালো। চাইলেই আপনি গুগোল দেখে এরকম একটা লিস্ট তৈরি করে নিতে পারেন।
প্রিয় মুভি বাছাই করাটা খুব কঠিন ব্যাপার। গত একশো বছরে চলচ্চিত্রের ইতিহাস বহুদূর বিস্তৃত হয়েছে। নির্বাকযুগ থেকে সবাকযুগ, সাদাকালো থেকে কালারছবিতে আসতে আসতেই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বেশ বড় কয়েকটা বিল্পব হয়ে গেছে। চলচ্চিত্রের ইতিহাসের প্রবাদপুরুষ অভিনেতা, নির্মাতা চ্যাপলিন তো সেই নির্বাক সাদাকালো যুগেরই মানুষ। গোল্ডরাশ, দ্যা সার্কাস, সিটি লাইট মুভিগুলো দেখলে এখনো আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। দেখলে বিশ্বাস হয় না এসব ফিল্মগুলো তৈরি হয়েছে প্রায় একশো বছর আগে। চ্যাপলিন ছিলেন যান্ত্রিকসভ্যতার বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠস্বর। চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে তিনিই প্রথম চিৎকার করে বলেন, ইউ আর নট মেশিন, ইউ আর এ হিউম্যান বিং। অথচ চলচ্চিত্র তো যন্ত্রই। চলচ্চিত্র তৈরি করার প্রথম শর্তই হচ্ছে এটা একটা টেকনিক্যাল ব্যাপার। কিন্তু, মহান নির্মাতারা এটা কখনোই মানতে চাননি। টেকনোলজি ব্যবহার করে তাঁরা এর মধ্য দিয়ে মানবতাকেই প্রকাশ করতে চেয়েছেন। মানুষের কৃতিত্ব তো এখানেই, সে যন্ত্রকে রূপান্তর করেছে শিল্পে।
খুঁজলে এদিক-ওদিক তিন-চারশো ছবি পাওয়া যাবে বাংলাদেশেই। কিন্তু, এ তো ছবি কি দেখার দরকার আছে? চলচ্চিত্র কি শুধু সময় কাটানোর ব্যাপার? এখন এটাই হয়ে গেছে। চলচ্চিত্র মানেই যেন বিনোদন। নাচগান। চলচ্চিত্রের সেই মহান ঐতিহ্য আসলে হারিয়ে গেছে।
আপনি আপনার পছন্দের তালিকা বাছাই করে নিন গুগোল থেকে। প্রতিদিন না পারলে প্রতি সপ্তায় একটা ভালো মুভি দেখুন। একটা ভালো ফিল্ম আমাদের জীবনকে আরো সুন্দর করে, মহান করে।