বাণিজ্যিকীকরণে পাট পলিথিনের দাম কমবে
ফারুক আলম : বর্তমানে বাজারে যেসব পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে তার সবগুলোই মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে নিশ্চিত পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে। পলিথিন ব্যাগের এই বিপর্যয় থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে বাজারে আসছে পাটের পলিথিন ব্যাগ। অর্থাৎ পলিথিন ব্যাগে বিকল্প হিসেবে পাটের পলিথিন বাজারে পাওয়া যাবে। ফলে পাটের পলিথিন ব্যবহারের যেসব বাড়বে তেমনি পরিবেশেও রক্ষা পাবে। তবে প্রথমে পাট পলিথিন ব্যাগের দাম একটু বেশি হলেও কমার্শিয়াল পর্যায়ে পাট পলিথিব ব্যাগ তৈরির কারখানা হলে দাম কমে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পাট পলিথিন ব্যাগের দাম নির্ধারিত হয়নি। তবে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিছু দিনের মধ্যে পলিথিন ব্যাগের দাম নির্ধারণ করা হবে।
পাট পলিথিন তৈরির বিষয়ে পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, সোনালি আঁশ পাটের ব্যবহার বাড়াতে পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব ‘পলিথিন’ উৎপাদন করতে যাচ্ছে সরকার। পাট থেকে পরিবেশবান্ধব পলিথিন আমরা বানাব, বিশ্ব চেয়ে দেখবে। পলিথিনের ব্যবহারের কারণে গ্রামে-শহরে আমাদের অনেক নদী নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকৃতি যাতে নষ্ট না হয়, কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে আমাদের পাটের ব্যবহার বাড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, পাট দিয়ে তৈরি হয়েছে পলিথিন ব্যাগ। অবিকল বাজারে প্রচলিত পলিইথাইলিন-পলিথিনের মতোই। তবে টেকসই বেশি। হালকা আর পাতলা। ব্যবহারের পর ফেলে দিলে মিশে যাবে মাটির সঙ্গে। পুড়িয়ে ফেললে ছাই-ভস্মে পরিণত হবে। সরকারিভাবে উৎপাদনের পর বেসরকারিভাবেও এই ব্যাগ উৎপাদনে উৎসাহ দেয়া হবে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি হবে এই ব্যাগ। বাজারে যে পলিথিন ব্যাগ আছে তার চেয়ে দেড়গুণ বেশি টেকসই এবং ব্যবহার স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাবে এই পাটের পলিথিনে। মির্জা আজম বলেন, সারা বিশ্ব এখন পলিথিনের বিকল্প খুঁজছে। আমরা পাটের পরিবেশবান্ধব পলিথিন দিয়ে এ বাজার ধরতে পারব। বিশ্বে পাট পলিথিনের একমাত্র জোগানদাতা হবে বাংলাদেশ। আমাদের পরিকল্পনা আছে, সারা বিশ্বের পাটের পলিমার ব্যাগের বাজার দখল করার।
পরিবেশবিদের মতে, কিছু দিন পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে একটা লাগাম এলেও ফের আগের মতোই অবস্থা। কখন পলিথিন আগুনে পোড়ালে দূষণটা আরও বাড়ে। পলিথিন পোড়ানোর গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হচ্ছে। বাড়ছে বায়ু দূষণ। কারণ, পলিথিন পুড়লে সালফার, নাইট্রোজেনঘটিত একাধিক গ্যাসের সঙ্গে কার্বন মনোক্সাইডের মতো গ্যাস, ডাইঅক্সিনের মতো বিষাক্ত জৈব রাসায়নিক তৈরি হয়। যা মানব দেহে প্রবেশ করলে রক্ত দূষিত হয়। শরীরের ক্ষতি হয়।
এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রেজাউল কাদের আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, প্রথম অবস্থায় সরকারিভাবে পাট পলিথিন ব্যাগের প্রচার চালানো হচ্ছে। ফলে পাট পলিথিনের দামটা একটু বেশি পড়বে। যখন বাজারে পাট পলিথিন ব্যাগের চাহিদা বেড়ে যাবে এবং কমার্শিয়ালী পর্যায়ে পাট পলিথিন কারখানা তৈরি হলে দাম কমে আসবে।
তিনি বলেন, বাজারে পলিথিন ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদা পূরণে পাট পলিথিন যদি প্রোডাকশনে আসে তাহলে বাজারে ব্যাপক সাড়া পড়বে। তিনি বলেন, ক্রেতা বাজারে গিয়ে মাছ কিংবা সবজি কিনবে তখন পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে চাই তো না। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। এখন ক্রেতারা বাজারে গিয়ে পাটের পলিথিন ব্যবহার করবে।
যুগ্ম সচিব বলেন, পাটের পলিথিন দেখতে ঠিক বাজারে যেসব পলিথিন ব্যাগ পাওয়া যায় তেমনি। পাটের পলিথিন ব্যাগ ও বাজারে এখন যেসব পলিথিন ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে তা পাশাপাশি রাখলে লাগাদা কঠিন। দুটি দেখতে একই রকম। তবে পাটের পলিথিন ব্যাগ আগুনে পুড়ালে ছাঁই হয়। আর এখন যেসব পলিথিন ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে তা আগুনে পোড়ালে আঠা হয়। পাট পলিথিনের ব্যবহার যখন বাড়বে তখন কোয়ালিটিও বাড়বে। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো। প্রথমে কোন জিনিস ভাল থাকে পরে আস্তে আস্তে খারাপ হয়।