বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন বোনাস হোক সবার
মো. আবদুল কুদ্দুস
লেখক: সহকারী প্রক্টর, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী
এর জন্য করণীয় হলোÑ দেশের স্বল্পসংখ্যক সরকারি চাকরিজীবী, স্বল্পসংখ্যক বেসরকারি চাকরিজীবী এবং বাঁকি অন্যান্যরা যারা যে রকম সামাজিক নিরাপত্তা সেবাভোগী আছেন তাদের প্রাপ্যহারে বাংলা নববর্ষ বোনাস প্রদান করলে এ উৎসব সার্বজনীন ও সুখময় উৎসব হতে পারে। এ লক্ষ্যে জরুরি বিষয় হলোÑ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি বাস্তবধর্মী ‘সার্ভিস রুল’ তৈরি করা যেখানে সরকারে ইচ্ছা-অনিচ্ছার সহজ প্রতিফলন ঘটবে। যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে। কর্মীর উৎপাদনশীলতা বাড়বে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হবে। একটি ন্যায়ভিত্তিক শান্তির সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। কেননা দেশ গড়তে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের অবদান নয় বরং বেসরকারি খাতে কর্মরত মানুষের রয়েছে অমূল্য শ্রম। রয়েছে ঘরে বাহিরে অন্যান্য আনপেইড মানুষের ডেডিকেশন। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরিতে, স্বাস্থ্য ও সেবাখাতে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি ও অন্যান্য খাতের মানুষ অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ াচ্ছে। পৃথিবীর কোনো দেশে নববর্ষ ভাতা প্রদানের কী সংস্কৃতি আছে তা আমার জানা নেই। তবে এটুকু জানা আছে, একটি জাতি তার কর্মঠ অথবা অকর্মঠ নাগরিকদের দিয়েই তাদের ইতিহহাস লিখবে। তাদের কাজ মোতাবেক পরিচিতি পাবে। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে পৃথিবীতে ‘সমস্যা’ ও ‘সমাধান’ দুটো শব্দ একসঙ্গে থাকবে তার বিষয়ে। বীর বাঙালি হিসেবে আমরা সমস্যা না সমাধানের অংশীদার হব সেটি আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাানুষের দুটি হাতে মানবতার কল্যাণে সম্পাদিত কাজ স্বর্গীয় সদালাপ থেকে অনেক বেশি উত্তম।
দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে বিশ শতাংশ পরিবার এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে চল্লিশ শতাংশ পরিবার আর বাকি পরিবার কোনো চাকরির সঙ্গে সম্পর্কিত না হয়ে জীবন ও জীবিকা পার করছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের জিজ্ঞাসা হলোÑ পহেলা বৈশাখে সরকারের মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে নববর্ষের কারণে আনন্দ উৎসবে ভরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে? বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া বৈশাখের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাঙালির ঘরে কোনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারবে?
আজকের বাঙালি সমাজ ও ভবিষ্যৎ বাঙালি সমাজের মানুষের কথা ভেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন এই যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীÑ আপনি জাতির জনকের কন্যা। আপনার হাতে এদেশের বুক থেকে অতিদরিদ্র্য অভিশপ্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসতে শুরু করেছে। এখন আর এদেশের কোনো মানুষ অভুক্ত থাকে না। আপনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ স্বাক্ষরতার সম্মান অর্জন করেছে। আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ আজ সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মহাকাশে নভোযান পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। দেশের বৃহত্তম সেতু পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে। মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আপনার শাসনামলে দেশে একশোটিরও বেশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠিত হচ্ছে। মানুষের মধ্যে উৎসব আমেজের সংস্কৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনার অদম্য প্রতিভার কারণে ঢাকা মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রজেক্টের পথে এগিয়েছে। উন্নয়নের এ গতিধারা অব্যাহত রাখতে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের অনুষ্ঠান পহেলা বৈশাখের ভাতা বেসরকারি চাকরিজীবীরা পাবে না এমন হতে পারে না! বাংলার আপামর জনসাধারণের মুখে হাসি ফোটাতে আপনি দয়া করে একবার দেশের বেসরকারি খাতের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বসে সমঝোতার মাধ্যমে সরকারের ঘোষিত উৎসব ভাতার সমপরিমাণ ভাতা ঘোষণা করলে দেশের মানুষ চিরদিন আপনাকে মনে রাখবে। রচিত হবে একটি ব্যতিক্রমধর্মী ইতিহাস। বাংলার আপামর জনসাধারণের সঙ্গে আমিও আপনার এই মহতি উদ্যোগের আশায় রইলাম।(শেষ)
সম্পাদনা: আশিক রহমান