দিনশেষে মানুষ একা
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
‘ধরা খাওয়া’ বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোনো পুরস্কার থাকলে সেটা সম্ভবত আমি পেতাম! জীবনে সবচেয়ে বেশি ধরা খেয়েছি পুরুষদেরকে বিশ্বাস করে। ভুল লোককে বিশ্বাস করার মাশুল দিয়েছি কড়ায় গ-ায়। পরীক্ষা নষ্ট করেছি, মাকে দুই একবার মিথ্যে বলেছি, দু-একবার রেজাল্ট খারাপ করেছি, একবার সুইসাইড করতে গিয়েছি, দরজা আটকে দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছি… আরও কত কি! কাজের কাজ একটাই হয়েছে, সেটা হচ্ছে শিক্ষা হওয়া! অতিমাত্রায় শিক্ষা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়েছে ভুল লোককে ভালোবাসার শিক্ষা।
যেবার ঠিক করেছিলাম অমুক আমাকে ভালোবাসে না, কাজেই বেঁচে থেকে কি হবেÑ সেইবার সুইসাইড করতে গিয়ে ফিরে এসে দেখলাম, সুইসাইড যখন সফলভাবে করতেই পারিনি, তখন একটা পরীক্ষা করা যাক! কাজেই যার জন্য সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম তাকে আমার এক বন্ধুকে দিয়ে ফোন করালাম। তার আগে বলে দিলাম বলবিÑ প্রীতি মরে গেছে, বলে গেছে, আপনি যেন ভালো থাকেন এটাই সে চায়।
আমার বন্ধু ফোন করে নিখুঁত গলায় আমার প্রাক্তন প্রেমিককে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, প্রীতি মরে গেছে। মরে যাওয়ার আগে বলে গেছে, আপনি যেন ভালো থাকেন, সে এইটাই চায়। আমার প্রাক্তন প্রেমিক যে কাজটা করল সেটা অবিশ্বাস্য। সে বলল, কোন প্রীতি? প্রীতি নামের কাউকে আমি চিনি না, রং নম্বর! এটা বলেই সে খুঁট করে ফোনটা কেটে দিল! আমার বন্ধু আমার সামনেই এরপর দুটো ‘হ’ বর্গীয় গালি দিল। তারপর বলল, দেখেছিস? কার জন্য মরতে গিয়েছিলি দেখেছিস?
আমি সেইদিন থেকে জেনে গিয়েছিলাম, কাউকে ভালোবাসা খুব ভালো। কিন্তু দুর্বলতাÑ আমি তোমাকে না পাইলে ছাড়িয়া মরিয়া যাইব, ইহকাল ত্যাগ করিব, জীবন বৃথা হইয়া যাইবে… এগুলোর কোনো দাম নেই। দিনশেষে মানুষ একা। ভালোবাসা ঠিক ততক্ষণই ভালোবাসা, যতক্ষণ হাসতে হাসতে, গাইতে গাইতে কাউকে জড়িয়ে ধরে বেশ ভালো থাকা যাচ্ছে। কাউকে নিজের মনের সমস্ত কথা খুলে বলা যাচ্ছে। কারোর কাঁধে মাথা রেখে আকাশ দেখা যাচ্ছে। কারও জন্য আকাশ দেখার জানালা বন্ধ হয়ে গেলে, হাসি বন্ধ হয়ে গেলে, আনন্দ করার উপাদান হারিয়ে গেলেÑ ওখানে ভালোবাসা, প্রেম কিছুই নেই!
যে মেয়েগুলো এসব প্রেমিক নামক ভুল মানুষের জন্য মরে যায়, তাদের বড্ড বলতে ইচ্ছে করেÑ সত্যিকার কোনো প্রেমিকের কাঁধে মাথা রেখে আকাশ দেখার আনন্দ পাবার আগেই আকাশের তারা হয়ে গেলে কেন মেয়ে?
লেখক ও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, মাইক্রোসফট
ফেসবুক থেকে