যেসব কথার আবেদন হারায়নি এখনো
মাহফুজ জুয়েল
১০ দিন আগে, ২০১৭ সালের ৭ মার্চ গেল। শহরজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণতা-ব শুরু হলো। কান ঝালাপালা। কিন্তু কান ঝালাপালার মধ্যেই কানে মধুবর্ষণও হলো। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, তার সেই ভাষণ এখনো আবেদন হারায়নি! এখনো অনেক কথা সমান প্রাসঙ্গিক! যেন আজকেই একটু আগেই বলেছেন। মনে হচ্ছিল, পিতা যেন তার কন্যাকে লক্ষ্য করেই বলছেন। সেই বজ্রকণ্ঠে। আজকের এই বাংলাদেশ নিয়ে! ওই ভাষণের মতোই তার বিভিন্ন সময়ে বলা অনেক কথা এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু কথা নিজের জন্যই টুকে রাখছি।
‘সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। তাই মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে গণমানুষের সুখ, শান্তি ও স্বপ্ন এবং আশা-আকাক্সক্ষাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে বাংলার নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি।’ ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ না থাকলে আমাদের স্বাধীনতার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।’ ‘গণআন্দোলন ছাড়া, গণবিপ্লব ছাড়া বিপ্লব হয় না।’ ‘জনগণকে ছাড়া, জনগণকে সংঘবদ্ধ না করে, জনগণকে আন্দোলনমুখী না করে এবং পরিষ্কার আদর্শ সামনে না রেখে কোনোরকম গণআন্দোলন হতে পারে না।’ ‘আন্দোলন মুখ দিয়ে বললেই করা যায় না। আন্দোলনের জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হয়। আন্দোলনের জন্য আদর্শ থাকতে হয়। আন্দোলনের জন্য নিঃস্বার্থ কর্মী হতে হয়। ত্যাগী মানুষ থাকা দরকার। আর সর্বোপরি জনগণের সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ সমর্থন থাকা দরকার।’
‘অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কোনোদিন একসঙ্গে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশসেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়।’ ‘রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের চারটি জিনিসের প্রয়োজন, তা হচ্ছেÑ নেতৃত্ব, ম্যানিফেস্টো বা আদর্শ, নিঃস্বার্থ কর্মী এবং সংগঠন।’ ‘ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে এনে দেশকে গড়া যাবে না। দেশের মধ্যেই পয়সা করতে হবে।’ ‘বাংলার উর্বর মাটিতে যেমন সোনা ফলে, ঠিক তেমনি পরগাছাও জন্মায়! একইভাবে, বাংলাদেশে কতকগুলো রাজনৈতিক পরগাছা রয়েছে, যারা বাংলার মানুষের বর্তমান দুঃখ-দুর্দশার জন্য দায়ী।’ ‘যদি আমরা বিভক্ত হয়ে যাই এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও মতাদর্শের অনৈক্যের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে আত্মঘাতী সংঘাতে মেতে উঠি, তাহলে যারা এদেশের মানুষের ভালো চান না ও এখানকার সম্পদের ওপর ভাগ বসাতে চান তাদেরই সুবিধা হবে এবং বাংলাদেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত, ভাগ্যাহত ও দুঃখী মানুষের মুক্তির দিনটি পিছিয়ে যাবে।’
‘আর সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুসলমান তার ধর্মকর্ম করবে। হিন্দু তার ধর্মকর্ম করবে। বৌদ্ধ তার ধর্মকর্ম করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না।’ ‘ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।’ ‘ভুলে যেয়ো না। স্বাধীনতা পেয়েছ এক রকম শত্রুর সঙ্গে লড়াই করে। তখন আমরা জানতাম আমাদের এক নম্বর শত্রু পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও শোষকগোষ্ঠী। কিন্তু, এখন শত্রুকে চেনাই কষ্টকর।’ এবং ‘শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।’
লেখক: কবি, সাংবাদিক ও আন্দোলনকর্মী
সম্পাদনা: আশিক রহমান