প্রধানমন্ত্রী আজ মাগুরায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন
রক্সী খান, মাগুরা: আজ মাগুরা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হওয়া ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন এবং ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বিকাল ২টায় তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মাগুরায় এখন উৎসবের আমেজ। শহর সাজানো হয়েছে বিলবোর্ড আর ব্যানার ফেস্টুনে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-সহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনও প্রধানমন্ত্রীর এ সফর সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাগুরা স্টেডিয়ামে প্রস্তুতকৃত ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ১৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হওয়া ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন সেগুলো হচ্ছেÑ মাগুরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, শ্রীপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, মহাম্মদপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদর উপজেলার মঘি ইউপি অফিস হতে আন্দোলবাড়িয়া সড়কে ফটকি নদীর উপর ১০০.১০ মিটার ব্রি নির্মাণ, সদর উপজেলার কাটাখালী জিসি-ইছাখাদা আর অ্যান্ড এইচ পর্যন্ত প্রায় ৯.৭১ কিলোমিটার সড়ক, ৩০.৫০ মিটার নতুন বাজার সেতু, ৩৫০ ঘনমিটার প্রতি ঘণ্টা ক্ষমতাসম্পন্ন ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়াম, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রশাসনিক ভবন, সদর উপজেলার বেলনগর এলাকায় হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার(তৃতীয় পর্যায়), আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ ভবন ও অতিথিশালা, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ৫০ শয্যার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন, শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, মাগুরা টেক্সটাইল মিল পুন:উৎপাদন কার্যক্রম, শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ ১৯টি প্রকল্প ।
একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকৃত ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑ মাগুরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, শালিখা উপজেলাধীন বুনাগাতি হতে বৈরইল পলিতা সড়কে নালিয়া ঘাটে ফটকি নদীর উপর ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, শালিখা উপজেলাধীন বরইচারা আটিরভিটা-বরইচারা বাজার সড়কে ফটকি নদীর উপর ৬৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, শালিখা উপজেলার বাউলিয়া-শরশুনা সড়কে চিত্রা নদীর উপর ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, জাতীয় মহাসড়কের (এন-৭) মাগুরা শহর অংশ ৪ লেনে উন্নীতকরণ, মাগুরা পৌরসভার তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়), মাগুরা-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে পাঁচ একর জায়গায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিইবেশন সেন্টার, শ্রীপুর উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম এবং শালিখা উপজেলায় মিনি স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ।
উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য মাগুরা স্টেডিয়ামে ফলক বসানো, জনসভার জন্য মঞ্চ প্রস্তুতকরণসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে বলে মাগুরা জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন। ফলক উন্মোচনের পর দুপুর দুইটায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন।
মাগুরায় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এর আগে ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাগুরায় তিনি ‘বিকশিত মাগুরা’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাগুরায় আসেন। এরপর ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা মাগুরায় আদর্শ কলেজ মাঠের জনসভায় বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি মাগুরার উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের বলে ঘোষণা দেন। যার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মাগুরার উন্নয়নের বিষয়ে শেখ হাসিনার সুনজর দেখা গেছে বলে জানান দলীয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে মাগুরায় প্রধানমন্ত্রীর সফরের নিñিদ্র নিরাপত্তা দিতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। মাগুরা পুলিশ সুপার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, পুলিশের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। মাগুরার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বাহিনীর সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিজেদেরকে সার্বক্ষণিক আপডেট রাখা হচ্ছে। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান