রোহিঙ্গা স্থানান্তর, ঠেঙ্গার চর এবং একজন শেখ হাসিনা
রবিউল আলম
বাঙালি নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে কখনো ভুল করেনি। বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, পৃথিবী আজ দুভাগে বিভক্তÑ একভাগ শোষিত এবং আরেকভাগ শাসিত। আমি শোষিত মানুষের পক্ষে। সুদীর্ঘ ৪৫ বছরেও সেই অঙ্গীকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাঙালি, আর কোনোদিন পারবেও না বাংলার মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে। মানুষের নাম রোহিঙ্গা দিয়ে যখন রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে দেশ ছাড়া করেছে, জীবন নিয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে, তখন বাঙালির নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মমতার ভা-ার থেকে এবং পিতার অঙ্গীকার রক্ষায় ঠেঙ্গার চরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়সহ বসবাসের ব্যবস্থা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হতে পারে। নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি তার নাগরিকদের কাজে লাগানো তো দূরের কথা, রক্ষা করতেও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। একজন নেত্রী তার দেশের সর্বসাধারণকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেও নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে ভুল করেননি। শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করে অশান্ত মিয়ানমার উপহার দিলেন, তবুও তিনি নেতৃত্ব ছাড়লেন না। হাজারো প্রশ্নের জন্ম দিয়ে ইতিহাসের কলংক নিয়ে বেঁচে থাকবেন অথবা কলংকিত ইতিহাস হয়ে থাকবেন। পৃথিবী নিয়মমাফিক ঠিকই এগিয়ে যাবে, ঠেঙ্গার চরে একদিন শহর, বন্দর, শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবে। রোহিঙ্গারা আমাদের জাতীয় সম্পদ হবে এবং ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। হায়েনার দল যেমন জীবন কেড়ে নিয়েও ইতিহাস থেকে ও মানুষের হৃদয় থেকে জাতির জনকের নাম মুছে দিতে পারেনি, রোহিঙ্গাদের যথাযথ পুনর্বাসনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ জনশক্তি কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তাবাহিনীর মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক দেশে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার নামও ইতিহাস থেকে মুছে দিতে পারবে না। মানুষ মানুষের জন্য কথাটি প্রমাণ করতে অনেক দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মায়ানমার সরকার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মাধ্যমে নির্যাতন করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে রোহিঙ্গা বলে, জনশক্তি লাগানোর অভিজ্ঞতা নেই বলে, নেতৃত্বের যোগ্যতা কোথাও অর্জন করেননি বলে, মনের মাঝে মানুষের জন্য কোনো অনুভূতি জাগ্রত হয়নি বলে।
আমরা বাঙালিরা খুবই ভাগ্যবান যে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে আছি। নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দিতে পারছি, হোক না সেটা ঠেঙ্গার চরে। নিরাপত্তা, খাদ্য, বস্ত্র, জীবন চলার জন্য যা কিছু প্রয়োজন সব ব্যবস্থা আমাদের সরকারই তো করবে। মানুষের জীবন বাঁচাতে শেখ হাসিনা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন, আশা করছি সফল হবেন।
শুনেছি অস্ট্রেলিয়া একসময় গভীর জঙ্গল ছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অপরাধীদের সাজা হিসেবে জঙ্গলে ফেলে আসত। ভয়ঙ্কর জীব-জানোয়ারের আক্রমণে অনেকেই জীবন দিয়েছে কিন্তু বেঁচে থাকা অপরাধীরা ধীরে ধীরে জনবসতি গড়ে তুলে আজকের এই অস্ট্রেলিয়া উপহার দিয়েছেন, ঠেঙ্গার চর সে থেকে অনেক উন্নত, বিশ্ববাসীকে আস্থা রাখতে হবে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার উপর। তিনি মনে করেন মানুষ মানুষের জন্য, শেখ হাসিনা জানেন জনশক্তি অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ। সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে, মানবসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হবে। বিশ্ববাসীকে দেখাতে পারব, আমরাই পারি পৃথিবীকে জাগাতে, আমরাই পারি বিশ্বে সভ্যতা আনতে। যে জাতি ভাষার জন্য জীবন দিতে পারে, যে জাতি স্বাধীনতার জন্য রক্তের গঙ্গা ভাসাতে পারে, সেই জাতিই পারে মানুষের সেবায় নিজের জমি, অর্থ দিয়ে সেবা করতে।
রোহিঙ্গা বলে আমরা অবহেলা করিনি, কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি, হোক না ঠেঙ্গার চরে, বাংলাদেশের বাইরে তো নয়। এখানে আশ্রয় গ্রহণকারীদের উপর নির্যাতন হবে না, বিনা বিচারে গণহত্যা হবে না, নারী নির্যাতন হবে না, সরকারের সকল নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোর সদয় দৃষ্টি থাকবে ঠেঙ্গার চরে। মানবিক সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত হবে, শেখ হাসিনার দৃষ্টি আজ বান্দরবানে, ছিটমহলে বাংলার অবহেলিত অঞ্চলগুলোর দিকে। রংপুরের মঙ্গা অঞ্চলে আজ মঙ্গা নেই, পদ্মার চরে আজ বাতি জ্বলে, সুন্দরবনে আজ জলদস্যু ও বনদস্যুরা থাকতে পারে না, হাতিয়ার নিঝুম অঞ্চলে আজ পশুপালন শুরু হয়েছে, ধীরে ধীরে ঠেঙ্গার চরের উন্নয়নের বিষয়টি আমাদের অনুধাবন করতে হবে। শেখ হাসিনার নজর পড়েছে ঠেঙ্গার চরে, আমরা আস্থা রাখতে পারি। মানুষের জন্য, মানুষের সেবার জন্যই শেখ হাসিনার জন্ম হয়েছে, তাই আনন্দে গাইতে পারি ভুপেন হাজারিকার সেই জগৎ বিখ্যাত গানÑ ‘মানুষ মানুষের জন্য, ঠেঙ্গার চর রোহিঙ্গাদের জন্য, শেখ হাসিনা আমাদের জন্য’।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান