কারাগারে বিনা অপরাধে আটকদের ক্ষতিপূরণ দিক রাষ্ট্র
ড. বদরুল হাসান কচি
‘যারা বিনা অপরাধে কারাগারে আটক রয়েছেন তারা সংশ্লিষ্ট আটককারী কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। এছাড়া যদি কেউ রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ইচ্ছাপোষণ করে তবে আইনে সে বিধানও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আটক অপরাধীদের পরিসংখ্যান নিয়ে তাদের বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে।’ বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম কোনো সরকারপ্রধান এ কথা উচ্চারণ করেছেন যে, যারা বিনা অপরাধে আটক রয়েছেন, তারা সংশ্লিষ্ট আটককারী কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। এটা দীর্ঘদিনের একটা জনপ্রত্যাশা এবং তা পূরণে অঙ্গীকার ব্যক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। ৮ মার্চ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মিলনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনকালে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটক থাকা এক ব্যক্তির মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার পর এ বিষয়ে অনেকেরই নজর পড়ে। লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নির্দেশনায় দেশের কারাগারগুলোতে বিনা বিচারে আটক অন্তত পাঁচ বছর রয়েছেন, এমন ৪৬২ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়। এর মধ্য থেকে ১০ বছরের বেশি বিনা বিচারে আটক থাকা ৫৮ ব্যক্তিকে গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রধানত জামিন দেওয়ার একটা ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। কিন্তু কারও ক্ষেত্রেই এই পর্যন্ত পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অবশ্য বিনা বিচারে দীর্ঘ ১৭ বছর আটক শিপনের জামিন পাওয়ার পর পুনর্বাসনের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ওই সময় আদালত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের নিযুক্ত পিপি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। দীর্ঘসময় বিনা বিচারে পড়ে থাকার বিষয়ে এখানে জজ সাহেবদের গাফিলতিও রয়েছে। কেউ দায়িত্ব পালন করছেন না।’
তাই একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে দাবি জানাচ্ছি, অন্তত যারা ১০ বছরের অধিক সময় ধরে বিনা বিচারে আটক রয়েছে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেখানে আমাদের দেশে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ধারণা অচিন্তনীয় সেখানে এই উদ্যোগটি সর্ব মহলে প্রশংসনীয় হবে; পাশাপাশি এ উদ্যোগের ফলে বিনা বিচারে কারাগারে আটক রাখার বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, এটা একটি মানবিক দাবিও। কারও ভুল কিংবা গাফিলতির কারণে বিনা বিচারে দীর্ঘসময় কারাগারে থাকায় আটক ব্যক্তির কাজের জায়গাটি সংকোচিত হয়ে আসে। আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। একসময় জামিনে ছাড়া পেয়ে ব্যক্তি হয়তো মুক্ত বাতাস পায় কিন্তু জীবিকার চাহিদা পূরণ করতে না পেরে কারাগারের বাহিরের জীবনও তার কাছে কারাগারের মতোই দুর্বিষহ লাগে। তাই বিষয়টি রাষ্ট্র বিবেচনাসমেত সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আশা করছি।
লেখক: আইনজীবী ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান