সামাজিক মিডিয়ার সাবধানতা ও সম্প্রীতি
অজয় দাশগুপ্ত
যেকোনো বিষয়ে আমাদের অতিউৎসাহ আর সবকিছু দ্রুত বিষিয়ে তোলার অভ্যাস পুরনো। এদেশের অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরও আমরা দেখেছি কত সাংঘাতিক হতে পারে অপপ্রচার। খন্দকার মোশতাকের আমলে সেই অপপ্রচার এতটাই বেড়ে গিয়েছিল জনগণের এক বিরাট অংশ মনে করত আসলেই বঙ্গবন্ধুর সরকার এবং পরিবারে ছিল দুর্নীতি। সময়ের বিচারে সেসব অভিযোগ একসময় তলিয়ে যায়। এরপর থেকে ষড়যন্ত্র আর গুজবের রাজনীতি পোক্ত হয়ে বসতে শুরু করে। এখন এমন এর আর কোনো বাছ-বিচার নেই। যার যেভাবে খুশি যেভাবে ইচ্ছে তিলকে তাল বানায়। তালকে তিলে পরিণত করে মাফ পেয়ে যায়।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামাজিক মাধ্যম ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ। এটা এখন বড় ভয়ংকর জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের শান্তি নিরাপত্তা এমনকি জীবনকেও হুমকির মুখে ঠেলা দেওয়া হচ্ছে মাঝে মাঝে। এই নিয়ে কত কা- কতসব আপদ বিপদ। কারণ কী? কারণ অতি তুচ্ছ। কোনো এক মূর্খ বা লেখাপড়া না জানা মানুষকে জিম্মি করে তার নামে ভুয়া আইডি খুলে কিছু একটা লিখে দিলেই যদি দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেধে যায় অপরাধীরা কি চুপ থাকতে পারে? এমনিতেই দেশে সমস্যার অন্ত নেই। কত ধরনের বিপদ যে ওৎপেতে আছে। সাম্প্রদায়িকতা আছে। ঘাপটি মেরে আছে জমিজমা সম্পত্তির লোভ। আছে নারী ঘটিত লালসা। বড়লোক গরিবের লড়াই। রাজনৈতিক উৎপাত। দলবাজি দলের নামে মাস্তানি দলের ক্যাডার বা সন্ত্রাসীদের অনাচারও এখানে বড় বিষয়। সামাজিক মিডিয়া যদি ক্রমেই সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে এ বিপদ আমাদের অস্তিত্ব ধরে টান দেবে। সেদিন সামাজিক মিডিয়ায় ড. তুহিন মালিকের একটি স্ট্যাটাস নিয়ে আমিও লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম। সেটি ছিল দোলযাত্রা বা হোলি উৎসব নিয়ে। পোস্টটি ছিল মারাত্মক উস্কানিমূলক। এই ছোট স্ট্যাটাসকে ঘিরে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে যে আগুন তার আঁচ টের পেয়েছি সামাজিক মিডিয়ায়। ঢাকা চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মিছিল-মিটিংও হয়েছে। তারপরই দেখি তুহিন মালিক আমাকে জানিয়েছেন ওই আইডি ছিল ভুয়া বা ফেক। এ বিষয়ে তিনি তার নিজের যুক্তি প্রমাণও হাজির করেছেন। মতপার্থক্য আছে বলেই কারও ফেক আইডিকে সমর্থন করে তার বিরুদ্ধে কিছু বলা বা লেখাটা আমি যৌক্তিক মনে করি না। যার যার নিজের কৃতকর্ম বা আচরণের দায় তার নিজের। তুহিন মালিক অতীতে যা করেছেন বা যেসব কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সেগুলো তার ও আইনের ব্যাপার। এবারের বিষয়ে আমি যেহেতু কথা বলেছি আমার দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হবে। যদি ফেক আইডি থেকে তুহিন মালিকের নামে এই অপপ্রচার চালানো হয় তবে তা নিন্দনীয় অপরাধ। আইনের উচিত দোষীকে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া। কারণ এই জাতীয় উস্কানি ওই মানুষটির তো বটেই দেশ ও সমাজের জন্যও অমঙ্গলের।
এসব অপপ্রক্রিয়া থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতেই হবে। এগুলো অন্তহীন সমস্যা। এর পেছনে আছে রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি। স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজ প্রগতির ধ্বংস ও দেশের ভিতর শান্তি বিনষ্টের এসব কুকা- বন্ধ হোক। বন্ধ হোক ফেক বা ভুয়া পরিচয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, জাতিকে অপমান করা। শান্তি বিনষ্ট করে দেশের অগ্রযাত্রা বিনষ্টের বিরুদ্ধে সকলের সচেতনতার বিকল্প নেই আর।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান