অগ্নিঝরা মার্চ, স্বাধীনতা ও সংগ্রামী চেতনায় নারী
প্রফেসর ড. এম. শাহ্ নওয়াজ আলি
লেখক: সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন
অগ্নিঝরা মার্চ, বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। স্বাধীনতার মাস মার্চ প্রতিবছর আমাদের মাঝে ফিরে আসে একদিকে পাকিস্তানি হানাদার ও দেশিয় রাজাকার আলবদরদের নিরীহ বাঙালিদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের দুঃখ-বেদনা ভরা স্মৃতি নিয়ে। অন্যদিকে উত্তাল মার্চ প্রতিবছর বাঙালি জাতির কাছে উপস্থিত হয় মুক্তি সংগ্রামে এদেশের মজুর, শ্রমিক, ছাত্রজনতার অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাঙালি নারীদের যুদ্ধে যোগদানের দুঃসাহসিক স্মৃতি নিয়ে। দেশপ্রেমের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত নিয়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শতশত নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ বাঙালি জাতিকে করেছে গৌরবান্বিত। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বার্থক ফসল আজকের স্বাধীন-সার্বভৌম একটি দেশ।
মার্চ এলেই দুঃখ-বেদনাভরা স্মৃতির পাশে অনেক গৌরবগাঁথার স্মৃতিও মণিকোঠায় ভিড় করে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ হতে শুরু করে এ অঞ্চলে তথা অবিভক্ত বাংলায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এদেশের নারী সমাজের ভূমিকা অনন্য। কৃষক বিদ্রোহ, প্রজা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, নাচোল বিদ্রোহ এমনকি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও নারী সমাজ পিছিয়ে থাকেনি। সে কারণেই দেবী চৌধুরানী, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, নবাব ফওজুন্নেসা এবং ইলা মিত্রের মতো অসংখ্য মহীয়সী নারী কিংবদন্তির মহানায়িকা হিসেবে আজও ইতিহাসের পাতায় স্বরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন। অন্যদিকে এ সকল নারীর সাহস ও কর্ম আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রেরণা যুগিয়ে চলেছে বহতা নদীর স্রোতের মতো। এককথায় বলা যায় আমাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন কিংবা সমাজ জীবনেও নারীর ভূমিকা কোনোভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। তাই তো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের সময়োচিত এবং সাহসী উচ্চারণÑ ‘কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি, সাহস দিয়েছে প্রেরণা দিয়েছে বিজয়া লক্ষ্মী নারী’। সৃষ্টির পর থেকে আজকের সমাজ, সংস্কৃতি তথা বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি স্তরে উন্নয়নের ক্ষেত্র নারীর অবদান অনস্বীকার্য। একজন নারী কারও বোন, মা কিংবা স্ত্রী। যদিও পৃথিবীতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীর অসংখ্য অবদান মাটিচাপা পড়ে যায়। আর সে রকম একটি কীর্তিগাথা ৭১-এ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের শহর-বন্দর-গ্রামের শিক্ষিত, অশিক্ষিত ও নিরক্ষর অসংখ্য নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যদিও আজকে ইতিহাস বিকৃতির জোয়ারে প্রকৃত সত্য পাল্টে যাচ্ছে। ’৭১-এ মুক্তি সংগ্রামে স্বাধীনতার মহানায়কের অবদানকেই পুরোপুরি মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। এ প্রেক্ষাপটে মুক্তি সংগ্রামে অকুতোভয় সেসব বীরাঙ্গনা নারীর অবদানকে অস্বীকার করা তো স্বাভাবিক একটি বিষয় মাত্র!
স্বাধীনতা মানুষের আজন্ম পিপাসা। আর এ পিপাসা থেকেই জন্ম নেয় সংগ্রামী চেতনার। এ সংগ্রামী চেতনাবোধই মানুষের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথকে সুগম করে, স্বাধীনতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হওয়ার পর বাঙালি জাতির ওপর নেমে আসে আরেকটি নব্য উপনিবেশবাদ। দীর্ঘ ২৩ বছর এ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের শেষ প্রহর এ অগ্নিঝরা মার্চ। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ লোকের ঐতিহাসিক সমাবেশ ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এরপর আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ হয় ২৬ মার্চ। সৃষ্টি হয় রক্তাক্ত অধ্যায়ের। পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের কাছে এদেশের মুক্তিকামী বাঙালিরা লাঠি, ফলা, তীর-ধনুকসহ হালকা ধরনের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়ে। তবে তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল মনোবল। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাক হানাদারদের বিতাড়িত করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৪৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে যে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সেখানে এদেশের নারীদের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। মুক্তি সংগ্রামে শতশত নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের স্বার্থক ফসল আমাদের বিজয়। অন্যদিকে এদেশের লাখ লাখ গৃহবধূ, মা ও বোন মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে জীবন রক্ষা করেছে, খাদ্য দিয়েছে, ভালোবাসা দিয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে সেইসঙ্গে পাক হানাদার ও দোসরদের সন্ধান দিয়েছেন তা ¯¦র্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ’৭১ সালের প্রথমদিক থেকেই পূর্ববাংলার সংগ্রামী নারীর সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং, সামরিক ট্রেনিং নিতে শুরু করেন বিভিন্ন অঞ্চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন অনেক নারী। সে সময়ের জনপ্রিয় নেত্রী আয়েশা খানম, কাজী রোকেয়া সুলতানা, মনিরা আক্তার, হোসনে আরাসহ আরও অনেক ছাত্রী নেত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামকে সফল করে তোলার ব্যাপারে নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যান। তৎকালীন সংসদ সদস্য রাফিয়া আক্তার ডলি, সাজেদা চৌধুরী ও মমতাজ বেগমের উদ্যোগে ও সহযোগিতায় গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রুপ গড়ে ওঠে। ১১ নম্বর সেক্টরে দেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের নিরক্ষর মহিলা তারামন বিবি রাইফেল হাতে যুদ্ধ করেছেন। ৯ নম্বর সেক্টরে অনেক মহিলা গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছিলেন। দেশের পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার শিরিন বানু ছেলেদের পোশাক পরে থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে দুঃসাহসিকভাবে শত্রুর মোকাবিলা করেছেন। শিরিন বানুর মতো এ রকম আরও একজন বীর মহিলার নাম বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য তিনি হলেন কাকন বিবি (মুক্তিবেটী)। সময়ের প্রবাহে নাম না জানা আরও অনেক নারী আমদের স্মৃতির পাতা থেকে মুছে গেছেন। হয়তো বা আর কোনোদিন তাদের নাম ঠিকানা খুঁজে বের করা সম্ভব হবে না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারামন বিবি বীর প্রতীকের নাম। ১১ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দীর্ঘ ৯ মাস অকুতোভয়ে যুদ্ধ করার পরও দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি আমাদের কাছ থেকে আড়ালে ছিলেন। নারী যোদ্ধা হিসেবে তার নাম হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এমনকি তিনি নিজেও জানতেন না স্বাধীনতাযুদ্ধে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে বিশেষ খেতাবে ভূষিত করেছে। কিন্তু ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক চেষ্টা ও খোঁজাখুঁজি করে তারামন বিবি বীর প্রতীকের সন্ধান পাওয়া যায়। মুক্তি সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে নারীর অংশগ্রহণ ছাড়াও অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জনগণকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করার কাজ চালিয়ে যান শতশত নারী। সার্বিকভাবে নারী যোদ্ধাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও প্রশিক্ষণে উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারে প্রেরণা যুগিয়েছেন সুফিয়া কামাল। বিভিন্ন রণাঙ্গনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তুলতে সানজীদা খাতুনের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বেতারের মহিলা শিল্পীদের অবদান চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যোগাতে দেশাত্মবোধক ও উদ্দীপনামূলক গান গাইতেন এসব শিল্পী। মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থায় যেসব মহিলা শিল্পীর কথা বাঙালি জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে এদের মধ্যে উমা খান, নমিতা ঘোষ, শেফালী ঘোষ, স্বপ্না রায়, মালা খুররম, রূপা ফরহাদ, ডালিয়া নওশীন, রমা ভৌমিক দীপা ব্যানার্জী আরতি ধর, লীনা দাস, অনিতা বসু, চায়না নিয়োগী, কবিতা দাস, ইতি বিশ্বাস, সাহানা চৌধুরী প্রমুখ। ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমির কাহিনী সংবলিত ‘একটি সূর্যের জন্ম’ শীর্ষক গীতি আলেখ্যর মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কলকাতার রবীন্দ্রসদন, ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়সহ পশ্চিম বাংলার বর্ধমান, বনগাঁ, মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্থানে জনমত জাগিয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন এসব মহিলা শিল্পী। এছাড়া প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের আর্থিক সাহায্য করার জন্য শিল্পী বারিণ মজুমদারের নেতৃত্বে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল সেখানেও অংশগ্রহণ করেছিল অসংখ্য বাঙালি নারী। ড. মযহারুল ইসলাম, ড. এ আর মল্লিক প্রমুখ বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে যে কমিটি হয়েছিল সেখানেও ছিলেন অনেক নারী লেখক ও বুদ্ধিজীবী। তাদের মধ্যে উম্মে কুলসুম, আইভি রহমান, নূরজাহান মযহার, আক্তার ডলি, মুশতারি শফি, কুলসুম আসাদ প্রমুখ অগ্রগন্য।
অন্যদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বাইরে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পাটি (মোজাফফর), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পাটি (মনি সিং) প্রভৃতি রাজনৈতিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে সীমান্তবর্তী জেলা ও মহকুমাগুলোতে বেশকিছু যুব শিবির ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এসব যুব শিবির ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে অসংখ্য নারী মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিংপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে এ বাহিনীর সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব নেন কমরেড মনিকৃষ্ণ সেন, জিতেন দত্ত, শংকর বসু, মো. আফজাল, চিত্তরঞ্জন দেব, ডা. কালিপদ বর্মন। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নারীরা লালমনিরহাট, ফুলবাড়ী, মোগলহাট, কালীগঞ্জ, হাতিবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেয়। সংগঠকদের উদ্যোগে ফুলবাড়ীর নাওডাঙ্গা হাইস্কুলে আহতদের চিকিৎসার জন্য একটি ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা হয়। এ সময় বেশ কজন নারী মুক্তিযোদ্ধা এ হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা হলেনÑ আকলিমা খন্দকার, মাহমুদা ইয়াসমিন বিউটি, কনক প্রভা সরকার, জাহানারা বেগম, শামিমা আক্তার গিনি, পিয়ারী মমতাজ পারভিন প্রমুখ।
’৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাসের এ মুক্তি সংগ্রামে এদেশের লাখ লাখ গৃহবধূ, মা ও বোনের সবাই মুক্তি সংগ্রামে অংশ না নিলেও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা অবদান রেখেছেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা, জনসংযোগ, অর্থ সংগ্রহ, তথ্য আদান-প্রদান, সাহায্য সামগ্রী সংগ্রহ, খাবার সরবরাহ অনেক সময় নিজে না খেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণ, গুপ্তচরবৃত্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও নারী যোদ্ধাদের অবদান কম নয়। গুপ্তচরবৃত্তির মতো দুঃসাহসিক কাজেও নারীদের অংশগ্রহণ স্বাধীনতার ইতহাসে গৌরব ও সাফল্য বয়ে এনেছে। যুদ্ধের ৯ মাস গণসংযোগের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার দুরূহ দায়িত্ব পালন করেছিলেন ডা. ফৌজিয়া মোসলেম। এক্ষেত্রে মালেকা বেগম ও নিবেদিতা দাশ পুরকায়স্থও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ২ নম্বর সেক্টরের আওতাধীনে স্থাপন করা হয়েছিল ৪০০ শয্যার একটি হাসপাতাল। যা খড়, বাঁশ এবং অন্যান্য গ্রামীণ নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ড. ফৌজিয়া মোসলেম, ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম, সাইদা কামাল, সুলতানা কামালের মতো আরও অনেকেই ছিলেন এ হাসপাতালের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। তারা রাত-দিন প্রাণান্ত পরিশ্রম করে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার রান্না করে পাঠানো, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য আহত যোদ্ধাকে নিজগৃহে সেবা-যতেœর ব্যবস্থা করেছেন অনেক মা-বোন। মহিলা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বেগম বদরুন্নেছার নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি বিভিন্ন ক্যাম্পের আগ্রহী মেয়েদের হাসপাতালে নার্সিং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। স্বল্প সময়ের ট্রেনিং নিয়ে মহিলারা ছুটে গেছেন এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে আহতদের সেবা করার জন্য।
এ মার্চেই বাঙালি জাতি উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালন করতে যাচ্ছে স্বাধীনতার ৪৬তম বার্ষিকী। অনেক ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যেতে পারলেও নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতাও নারী শিক্ষায় পিছিয়ে আছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতির মাধ্যমে আমরা আবারও নতুন করে শপথ নেব। ‘এ বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’।
সম্পাদনা: আশিক রহমান