জাতিসংঘে প্রতিমন্ত্রী চুমকি নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে নারী সমাজের অগ্রসরতায় বিস্ময়কর সফলতা অর্জনের ফলে বাংলাদেশ এখন ‘নারীর ক্ষমতায়নে’ বিশ্বের বুকে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে এমডিজির অর্জিত সাফল্য বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের আগেই এসডিজি-৫ এর লিঙ্গসমতার পূর্ণ বাস্তবায়নে সাহায্য করবে। তিনি জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন, আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা অর্জন ও পৃথিবীকে নারীর জন্য একটি উৎকৃষ্ট স্থানে পরিণত করতে আরেকটিবার শপথ নেই।
গত সোমবার নিউইয়র্ক সময় জাতিসংঘ সদর দফতরে কমিশন অন দ্যা স্ট্যাটাস অফ উইমেন (সিএসডব্লিউ) এর চলতি ৬১তম সেশনে কান্ট্রি স্টেটমেন্ট পর্বে এ কথা বলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
এনা জানায়, সেশনটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘পরিবর্তনশীল বিশ্ব কর্মপরিবেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: অত্যন্ত সময়োপযোগী’।
চুমকি বলেন, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের যাত্রা শুরু হয় স্বাধীনতার পর থেকে। এসময়ই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গৃহীত হয়। প্রতিমন্ত্রী এ সভায় লিঙ্গ সমতা এবং নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার যে সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে তা তুলে ধরে বলেন, নারীর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আমরা ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১’ প্রণয়ন করেছি। নারীর কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কর্মজীবী নারীদের সন্তানের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন, দুস্থ নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। তৃণমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।
নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর মধ্যস্বত্ব¡ভোগীদের কোনোরকম হস্তক্ষেপ ব্যতীত বাজারজাতকরণে আমরা রাজধানী ঢাকায় জয়িতা নামে একটি মেগা শপিং মল প্রতিষ্ঠা করেছি। গত তিন বছরে বাংলাদেশের ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭১১ জন নারীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে যারা দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা প্রেরণ করছে।
নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৪ অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দশম। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন এর ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়নশীপ এওয়ার্ড’ ও গ্লোবাল পার্টনার ফোরামের ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ এওয়ার্ড অর্জন করেন। নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক মাইলফলক হিসাবে বেইজিং ডিক্লারেশন, প্লাটফর্ম ফর এ্যাকশন ও এজেন্ডা ২০৩০সহ জাতিসংঘের ‘ফ্রেমওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ দ্যা নিউ আরবান এজেন্ডার আওতাভুক্ত ‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট’ এবং উদ্বাস্তু ও অভিবাসী বিষয়ক নিউইয়র্ক ডিক্লারেশনের পূর্ণাঙ্গ, কার্যকর ও দ্রুত বাস্তবায়নে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ এমপি সিএসডব্লিউর ৬১তম সেশনে বাংলাদেশ ডেলিগেশনের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এছাড়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল ইসলামসহ ৯ সদস্যের একটি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সিএসডব্লিউ-এর ৬১তম সেশনে অংশগ্রহণ করছেন। উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ শুরু হওয়া এই সেশন আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে। সম্পাদনা : রফিক আহমেদ