স্বজাতির প্রতি ভালোবাসায় ইসলাম
আতিকুর রহমান
ইনসান শব্দটি উন্স থেকে নির্গত, অর্থ অপরের প্রতি ভালবাসা, সহমর্মিতা ও কল্যাণকামিতা । অপরের প্রতি সমবেদনা, শুভাকাঙ্খা এবং তাকে ধবংস ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করার অনুভূতিই উনস। এরূপ অনুভূতি যার অন্তরে বিদ্যমান সেই প্রকৃত ইনসান বা মানুষ। তা আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় ও পছন্দনীয়। যেমন পবিত্র কালামে পাকে এর দৃষ্টান্ত হলো পিঁপড়া একটি ক্ষুদ্র ও নগন্য সৃষ্টি। কোন ক্ষুদ্রতম বস্তুর উপমা আসলে পিঁপড়ার নাম আসে। পৃথিবীর সব চেয়ে ক্ষুদ্র ও নগন্য প্রাণী পিঁপড়া অথচ পিঁপড়ার নাম উল্লেখ করে কুরআনে কারীমে একটি সুরা নাযিল করেছেন। তার কারণ কী ছিল? কারণ একটিই, স্বজাতির ভালবাসা ও সমবেদনা। হযরত সুলাইমান আ: এর বাহিনী যখন পূর্ণ শোর্য-বীর্য আর প্রবল প্রতাপের সাথে রাস্তা অতিক্রম করছিল, তখন পিঁপড়াদের সরদার স্বজাতির কল্যাণে সুলাইমান আ: এর সেনাদের পদপিষ্ট হওয়া থেকে তাদের বাঁচানোর জন্য এ আহবান জানাল, ‘‘হে পিপীলিকার দল ! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করো, যেন সুলাইমান এবং তার বাহিনী তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের পদতলে পিষ্ট করে না ফেলে।’’ [নামল :১৮]
স্বজাতিকে রক্ষা করার জন্য তাদের কল্যাণকামিতায় পিঁপড়ার মতো ক্ষুদ্র এই প্রাণী যখন একটি ডাক দিলো, তা আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় ও পছন্দনীয় হলো যে, পিঁপড়ার মুখে এই দরদ ভরা আওয়াজ দিয়ে একটি সূরা নাযিল করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রতি সেই অভিপ্রায়ই প্রকাশ করতে চাইলেন, স্বজাতির দরদে দরদি হওয়াটা তার কাছে কতইনা প্রিয়, এই সহমর্মিতার বড় কদর রয়েছে আল্লাহর দরবরে।
অপর দিকে কুকুরের কথাই ধরুন । কুকুর খুবই প্রভুভক্ত প্রাণী । কিন্তু তার বদভ্যাস হলো তার বসবাসের সীমানায় অন্য কারো প্রবেশ এবং তার সাথে আরেকটি কুকুরের আহারকে কোনভাবেই সহ্য করে না। কুকুরের সীমাহীন প্রভুভক্তি সত্ত্বেও মানুষের নিকটে থাকার উপযোগী পর্যাপ্ত গুণ বিদ্যমান থাকার পরও কুকুরের অসহমর্মিতার দোষ মানুষের ভিতরে সংক্রমিত হবার আশঙ্কা থাকায় ইসলামে কুকুর পালন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বিষয়টি লক্ষ করুন, মানবতার প্রতি সহমর্মিতা ও কল্যাণকামিতা আল্লাহর দরবারে কতইনা পছন্দনীয়। আর অপরের অকল্যাণ চাওয়াটা আল্লাহর কাছে কতইনা অপছন্দনীয়। বিশেষত জাতি যখন কোন ক্লান্তিকাল ও বিপদ মুহূর্ত অতিক্রম করে।
এ সময় জাতির ব্যথা ও যন্ত্রনা উপশমের উপায় তালাশ করা এবং বিপদ ও যন্ত্রনাদায়ক বিপদ থেকে উদ্ধার কার্যে সচেষ্ট হওয়া আল্লাহর কাছে কত যে প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য, তা অনুমান করা কষ্টসাধ্য। বর্তমান সময়ে গোটা মানবজাতি অশান্তি ও অস্থিরতায় নিমজ্জিত। বিষেশত মুসলিম উম্মাহ পৃথিবীর সকল দেশেই সীমাহীন পেরেশান অসহায়ত্ত ও দুরবস্থার শিকার, মুসলিম উম্মাহকে এই অসহায়ত্ব ও দুরবস্থা থেকে মুক্ত করা এক মহৎ কাজ। আল্লাহর দরবারে তা অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসনীয়।