ইবাদতের আনন্দ
মোস্তফা কামাল গাজী
ইবাদতের মাধ্যমে আত্মায় প্রশান্তি আসে, মন হয় প্রফুল্ল। মহান রাব্বুল আলামিন ইবাদতে এমন স্বাদ ও আনন্দ রেখে দিয়েছেন, যা মুমিন মাত্রই অনুভব করে। নবীজি (স) ও সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) আমলে তাই বুঝা যায়। তাঁরা ইবাদতে স্বাদ অনুভব করতেন বলেই দীর্ঘ নামাজ ও বেশি বেশি আমল করতেন। মানুষের ঈমান শক্ত ও দুর্বল হওয়ার ভিত্তিতে ইবাদতের স্বাদও হয় ভিন্ন ভিন্ন। হাদিসে আছে, হুজুর (সা) বলেন, ‘যার মধ্যে তিনটি জিনিস থাকবে, সে ইমানের স্বাদ অনুভব করবে। ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে সব চাইতে বেশি ভালোবাসা ২. কাউকে আল্লাহর জন্যেই ভালোবাসা ৩. কাফের হওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই ঘৃণা করা। (বোখারি:৬৯৪১)
নামাজে স্বাদ অনুভব হয় খুশু খুজুর মাধ্যমে। প্রত্যেক মুমিনের অন্তর নামাজের দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে। হজরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, হুজুর (সা) বলেন, ‘আমাকে দুনিয়ার নারী থেকে বিমুখ করা হয়েছে এবং নামাজকে করা হয়েছে চোখের শীতলতা। (আবু দাউদ:৩৯৩৯) তিনি হজরত বেলাল (রাঃ) কে বলতেন, বেলাল! নামাজে চলো। বেলাল (রা) বলেন, ‘আমরা তাঁর সাথে নামাজ আদায় করে মনে শান্তি পেতাম। (আবু দাউদ:৪৯৮৫)
নবীজি (সঃ) গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ নামাজ পড়তেন। হযরত মুগিরা ইবনে শু’বা (রাঃ) বলেন, ‘নবীজি (সঃ) এতো বেশি নামাজ পড়তেন যে, তাঁর দু’পা ফুলে যেতো। কেউ তাঁকে বললো, ‘আপনার তো সামনের, পেছনের সব গুনাহ মাফ করা হয়েছে, তবুও এতো আমল করেন!’ নবীজি (সঃ) বললেন, ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?’ (বোখারি:১১৩০) এভাবে ইসলামের প্রত্যেকটি কাজ তাঁরা আনন্দ নিয়ে করতেন। হজরত উসমান (রা.) কুরআনে স্বাদ পেয়েছেন বলেই তা একত্রিত করেছেন। তিনি বলতেন, ‘যদি আমার অন্তর পবিত্র হতো, তাহলে আল্লাহর কালাম আমাকে তৃপ্ত করতো না’।
[সিরাতে উসমান (রাঃ)] এ স্বাদ অর্জনের উপায় হলো, ১.নিবিষ্ট মনে, ধৈর্য নিয়ে ইবাদত করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ইমানদাগণ! তোমরা ধৈর্য ধরো, মোকাবেলায় দৃঢ় থাকো, লেগে থাকো এবং আল্লাহকে ভয় করো। তাহলে সফল হবে। (আলে ইমরান:২০০)
হজরত ফুজালা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বলেন, হুজুর (সঃ) বলেছেন, ‘ প্রকৃত মুজাহিদ হলো, যে নিজ নফসের ওপর সংযমী। (তিরমিজি:১৬২১)
২. ছোট বড় সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। এটি ইবাদতের ধারাবাহিকতা, স্বাদ নষ্ট করে। গুনাহ হয় মনের কঠোরতা থেকে। জাফর (রঃ) বলেন, আমি ইমাম মালেক (রঃ) কে বলেতে শুনেছি, ‘অন্তরের কঠোরতা থেকে বড় শাস্তি বান্দা পাবে না। (যুহদে আহমদ, পৃ:২৫৯) ৩. অতিরিক্ত পানাহার, কথাবার্তা পরিত্যাগ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘খাও, পান করো। অপচয় করো না। আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (আ’রাফ:৩১) আহমদ সালফ (রঃ) বলেন,’ অন্তরের প্রশান্তি গুনাহ থেকে বিরত থাকায়, পেটের প্রশান্তি কম খাওয়ায় এবং মুখের প্রশান্তি কম কথায়।’ (জাদুল মাআদ, পৃ:১৮৬)
৪. আমল কখনো বৃথা যাবে না, এ মন নিয়ে ইবাদত করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ইমানের আনে এবং ইবাদত করে তার প্রতি অন্যায় ও জুলুম করা হবে না। (তহা:১১২) আমাদের উচিৎ এ বিষয়গুলো সামনে রেখে ইবাদত করা। তাহলে আমরাও এর স্বাদ পেতে পারি।