দেড় যুগেও জরিপ হয়নি দক্ষিণের ডেঞ্জার জোন
বরিশাল প্রতিনিধি : চর পঢ়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিআইডবি¬উটিএ’র চিহ্নিত ডেঞ্জার জোনে এখন বাড়ি-ঘরও তৈরি হয়েছে। আর শান্ত অনেক নদীপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। বহু বছর জরিপ না হওয়ায় যেসব নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেসব নদীতে পানির স্রোত আর ঝড় উত্তাল রূপ নিয়েছে। নতুন জরিপ না হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের উত্তাল নদী পথের এসব এলাকা ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। ফলে সেইসব অশান্ত নদীতে ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী পরিবহনের বৈধতা মিলছে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন দখিনের অভ্যন্তরীন বিভিন্ন রুটে চলাচালকারী লঞ্চের চালকরা।
সূত্রমতে, গত দেড় যুগেও দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর কোনো জরিপ হয়নি। ফলে দেড় যুগ আগে চিহ্নিত ডেঞ্জার জোনেই প্রতিবছর ৭ মাস নির্দিষ্ট নৌযান ব্যতীত অন্যসব নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ থাকে। এবারও সেই পুরনো এলাকাই চলছে প্রশাসনের প্রহরা। অথচ নতুন করে গভীর ও উত্তাল নদীগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে চষে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট নৌ-যান।
বিআইডবি¬উটিএ সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে একবার মেঘনায় জরিপ চালিয়ে ডেঞ্জার জোনের সীমানা পুন.নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে ১৯৮০ সালে এবং সর্বশেষ ২০০০ সালের ১৮ জানুয়ারি জরিপ চালিয়ে মেঘনার ডেঞ্জার জোন এলাকা কমিয়ে আনা হয়। ডেঞ্জার জোন এলাকারমধ্যে ভোলার ইলিশা, দৌলতখান, মির্জাকালু, আলেকজান্ডার, হাকিমউদ্দিন, তজুমদ্দিন, শশীগঞ্জসহ অনেক¯’ান অন্তভুক্ত করা হয়। প্রতিবছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাস ওইসব নদীতে সাধারণ নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পথে নিরাপদে যাত্রী পরিবহনের জন্য বিআইডবি¬উটিসি’র পর্যাপ্ত সি-ট্রাক ও বেক্রসিং নৌযান না থাকায় এসব এলাকার যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ ছোট নৌ-যানে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানা গেছে, মেঘনার ডেঞ্জার জোন হিসেবে পরিচিত ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরগামী যেসব নৌযান ছেড়ে যাচ্ছে তাদের এখন আর উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিতে হয় না। শাহবাজপুর চ্যানেল ও ভোলা সদর উপজেলার ভাঙন কবলিত কাচিয়া ইউনিয়ন এবং দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন যে প্রমত্তা মেঘনায় একসময় বিলীন হয়েছিলো সেখানেই কয়েক বছর আগে বিশাল চর জেগে উঠেছে। এসব ইউনিয়নে সাইনবোর্ড ঝুঁলিয়ে পুনরায় বসতি গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও পাকা, আধা পাকা স্থাপনা পর্যন্ত দেখা যায়। একসময় শাহবাজপুরের চ্যানেলে ছিলো শুধুই উত্তাল জলরাশি। ভবানীপুর ও কাচিয়াসহ শাহবাজপুর চ্যানেলের কয়েকটি স্থানে আরও কিছু ছোট-বড় চর পাশাপাশি জেগে ওঠায় ইলিশা-মৌজুচৌধুরীর হাট রুটের সেই ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ এখন শান্ত নৌপথে রূপ নিয়েছে।
বিআইডবি¬উটিএ জানায়, সর্বশেষ জরিপ শেষে ডেঞ্জার জোনে শুধুমাত্র বেক্রসিং ক্ষমতাসম্পন্ন নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। দক্ষিণাঞ্চলে বেক্রসিং যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিগত মালিকানাধীন লঞ্চ রয়েছে এলসিটি কুতুবদিয়া ও এমভি টিপু। এলসিটি কুতুবদিয়া ২০০৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিত ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট রুটে চলাচল করতো। এরপর জাহাজটি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্ষা মৌসুমের টানা সাত মাস সেন্টমার্টিন-টেকনাফ রুটের নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় তখন কুতুবদিয়া ও কেয়ারী সিন্দাবাদ দক্ষিণাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ রুটে যাত্রী পরিবহন করতো। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান