স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সুশাসনের অভাবে ঝুঁকিতে ব্যাংকিং খাত
সেমিনারে বক্তারা
জাফর আহমদ : স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সুশাসনের অভাবে ব্যাংকিং খাত ঝুকিতে রয়েছে। ব্যাংকগুলোর নিজেদের অভ্যান্তরিন অডিট, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংককেও ইতিবাচক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম-এ ‘ইন্টারনাল কন্ট্রোল এ্যান্ড কমপ্লায়েন্স অব ব্যাংক-২০১৬’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। বিআইএমএম এর মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আবু হেনা মো. রাজি হাসান। প্যানেল আলোচক ছিলেন ব্যাংকার সামুদ্দিন আহমাদ, ইয়াসিন আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবীর, ইসলামি ব্যাংকের পরিচালক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। বিষয় বস্তুর উপর নিবন্ধ উপস্থাপন করেন তৌহিদুল ইসলাম ও মোহাব্বত হোসাইন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো.রাজী হাসান বলেছেন ব্যাংকিং খাতের বেশ কিছু জায়গায় সুশাসন না থাকায় অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন খুবই প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাতকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অনেক সময় দেখছি, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। ফলে কিছু কিছু অনিয়মের অভিযোগও উঠছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকে অভ্যন্তরিণ নিয়ন্ত্রণ এবং সুশাসন যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন থাকবে না। আইসিসিবি ব্যাংকিং খাতের তৃতীয় চোখ হিসেবে কাজ করে। তাই আইসিসিডি ডিভিশনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আইসিসিডি ডিভিশনের দুর্বলতা কারণে অনিয়ম হচ্ছে উল্লেখ করে ডেপুটি গভর্নর বলেন, সুশাসনের অভাবে ব্যাংকের শাখা থেকে ডিপোজিটরদের ২ হাজার কোটি টাকা প্রধান শাখায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় ব্যাংকের বোর্ডের বাইরের লোকজন এসে বোর্ড মিটিং করছে। এগুলো ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো খবর নয়। এভাবে চলতে থাকলে ডিপোজিটরদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে না-তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সুপারভিশনের জন্য লোকবল কম উল্লেখ করে ডেপুটি গভর্নর বলেন, সুপারভিশনের জন্য লোকবল মাত্র ৭৫০ থেকে ৮০০ জন। কিন্তু সারাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার। তাই লোকবলের অভাবে সব ধরনের সুপারভিশনে কিছু কিছু দুর্বলতা রয়েছে। বিআইবিএমের মহাপরিচালক বলেন, গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে বিআইবিএম অভ্যন্তরিণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিপালনের ওপর কর্মশালা করে আসছে। ব্যাংকিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিতে ব্যাংকারদের আগ্রহ বাড়ছে। হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের আইসিসিডি এখনো ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার। এমন অবস্থা পরিবর্তন না হলে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি বলেন, ব্যাংকারদের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এটি করতে না পারলে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম রোধ করা কঠিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ব্যাংকের গ্রাহকদের দিক বিবেচনা করে এ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাবতীয় পদক্ষেপ নেই। সর্বশেষ অভ্যন্তরিণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিপালনও ঠিক এ দিক বিবেচনা করে করা হয়েছে। নিরীক্ষা বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে এ নীতিমালায়। সম্পাদনা : শিমুল মাহমুদ