প্রবৃদ্ধি, সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতার দিন
বাংলাদেশে এখন প্রায় মানুষই দুবেলা খেতে পারছে। পড়তে পারছে। একসময় দেশের প্রায় বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ, মন্দা হতো, সেটা এখন হচ্ছে না। গ্রামে গেলে দেখা যায়, মসজিদে ঢোকার আগে জুতা সঙ্গে নিয়ে যেত, এখন আর কেউ জুতা সঙ্গে নেয় না। এবং মসজিদের সামনে কয়েকশ জুতা থাকলেও এখন আর কেউ জুতা চুরি করে না। আমার কাছে এগুলো খুবই ইতিবাচক বলে মনে হয়। মানুষের মন-মানসিকতাও পরিবর্তিত হচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনাও কিন্তু মানুষ বুঝছে। অনেক দেরিতে হলেও শত্রু-মিত্র বুঝতে পারছে তারা। কারণ পৃথিবীতে এমন দেশ কোথাও নেই বাংলাদেশের মতো, যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, বাংলাদেশ চায়নি তারা আমাদের আশেপাশেই বসবাস করে। একটা সময় তারা এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায়ও ছিল। তাদের প্রতিরোধ করতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা।
স্বাধীনতার পর আমরা অনেকগুলো সরকার দেখেছি। সামরিক সরকার, স্বৈরাচারী সরকার ও গণতন্ত্রের নামেও সরকার দেখেছি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী। বাংলাদেশ, বাঙালি চেতনার সরকার। বাঙালির সংস্কৃতির চেতনার সরকার। আমরা আমাদের ভুলগুলোও এখন বুঝতে পারছি। এক ধরনের মানুষ আছে যারা রাজনীতি সচেতন, তারা হয়তো কোনো দল সমর্থন করেন। আরেক ধরনের কিছু মানুষ আছেন, সাধারণ মানুষ, তারা সংখ্যায় বেশি। তারা রাজনীতি বুঝতে চান না। চান শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপনের নিশ্চয়তা। তাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ, তাদের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ।
স্বাধীনতার ৪৬ বছরে এখন আমরা। এখন ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে পারছে যে, আমাদের উন্নতি, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিভাবে হতে পারে। এই বোধটুকু ধীরে ধীরে জাগাচ্ছে বর্তমান সরকার। ভালো থাকার চর্চা, ন্যায়নীতিতে থাকার জন্য চর্চা করতে হয়, দুর্নীতিকে দমন করার জন্য বা রোধ করতেও চর্চা করতে হয়। কিন্তু একটা সরকার যদি নিজেই দুর্নীতি করে, স্বাধীনতার ভুল ইতিহাস শেখায়, মিথ্যা কথা বলে ইতিহাস বিকৃত করে সেখানে সাধারণ মানুষ তো বিভ্রান্ত হবেই। এখানে অতীতে মানুষকে ভুল, মিথ্যা ও বিকৃতি ইতিহাস পড়ানো হয়েছে। ধীরে ধীরে হলেও সেই জায়গা থেকে আমরা বেরিয়ে আসছি। বর্তমান সরকার প্রকৃত ইতিহাস ছেলেমেয়েদের সামনে, দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
ভাষার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, স্বাধীন হয়েছে। ভাষা আন্দোলন নিয়েও বিকৃতি করা হয়েছিল। এই বিকৃতি আমরা দীর্ঘদিন হতে দেখেছি। যারা রাজনীতি করেন, টেলিভিশনে কথা বলেন তারা খাটি ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছেন না। ইংরেজি, বাংলা, উর্দু, হিন্দি মিশিয়ে জগাখিচুরি কথা বলছেন।
একটা প্রজন্ম হয়তো ইতিহাস সম্পর্কে অন্ধকারে ছিল। কারণ জাতির জনক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করে যারা এ দেশের শাসন ক্ষমতায় এসেছিল তারা স্বৈরাচারী। আদালতকর্তৃকও প্রমাণিত হয়েছেÑ তাদের শাসনকাল ন্যায়সঙ্গত ছিল না। আমরা যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারব সেটা তো একেবারে আশার অতীত হয়ে গিয়েছিল। কি আস্ফালণ ছিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। তার সেই আস্ফালণ আজ কোথায় গেল? আমরা এখন এগোচ্ছি সামনের দিকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিচারের শাসনের এই ধারাবাহিকতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আইনের শাসন, গণতন্ত্র, উৎপাদন, সমৃদ্ধি ব্যাহত হয় এমন রাজনৈতিক কর্মকা- সহ্য করা উচিত নয়। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ এগোবে দুর্বার গতিতে।
পরিচিতি: চিত্রশিল্পী
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ/সম্পাদনা: আশিক রহমান