বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা
ফরিদুন্নাহার লাইলী
পাকিস্তান ও ভারতের মতো আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পাইনি। ২৩ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম এবং একাত্তরের নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেই বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। বাংলার অনেক সূর্যসন্তানই হয়তো বাঙালি জাতির শৃঙ্খল মোচনের স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছেন বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসে এক অমর নাম। তিনি একজন ব্যতিক্রমধর্মী নেতা। মুজিবের মধ্যে যত রাজনৈতিক গুণাবলি ছিল, বিশ্ব রাজনীতিতে কোনো বড় নেতার মধ্যেই হয়তো এককভাবে এত গুণের সমাহার দেখা যায় না। শত বছরের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কিউবার কিংবদন্তি নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো যথার্থই বলেছেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান। তাই আমি মুজিবকে দেখে হিমালয় দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।’
শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা বাড়ছিল ১৯৬৬ সাল থেকেই। বাঙালিদের কাছে তিনি সবচেয়ে বড় নেতা হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। কারণ, তারা জানতেন যে, একমাত্র তিনিই পারবেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাঙালিদের স্বার্থ রক্ষাকারী দল বলে পরিচিত হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল মাত্র উনিশ মিনিটের। কিন্তু এই সময়টুকুর মধ্যে তার মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি একইসঙ্গে আপসের কথা বলেন, দাবি উত্থাপন করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাও দেন। তিনি জনগণকে আহ্বান জানান, ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি করতে। দরকার হলে যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে। তিনি গ্রেফতার হতে পারেন, এটাও তিনি আশংকা করেছিলেন। তাই তিনি বলেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি’। তিনি ভাষণ শেষ করেন আসল কথাটি দিয়ে, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ-ই আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। …মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’
যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জার মুজিব ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন, কয়েক বছর আগে সেই দেশের অবমুক্ত গোপন দলিলে স্বীকার করা হয়েছেÑ শেখ মুজিব ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন।
যতদিন এই বিশ্বে মানুষের অস্তিত্ব থাকবে, বাঙালি জাতি বেঁচে থাকবে ততদিন শেখ মুজিবের নাম শ্রদ্ধাভরে উচ্চারিত হবে। শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, মুজিবই যে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ জন্মের ঐতিহাসিক কাজটি সম্পন্ন করেছেন, তা আজ বিশ্ব ইতিহাসের অংশ। তাই তো দুই বাংলার বিখ্যাত কবি অন্নদাশংকর রায় যথার্থই বলেছেন, ‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরি যমুনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’
লেখক: কৃষি ও সমবায় সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সাবেক সংসদ সদস্য
সম্পাদনা: আশিক রহমান