অস্ত্র উদ্ধারেও বিশেষ অভিযান দরকার জঙ্গিবাদ দমনে যৌথবাহিনীর অভিযান জরুরি হয়ে উঠেছে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: জঙ্গিবাদ দমনে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও তা বন্ধ করতে পারছে না। আর কোনো ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে ঘটনা ব্যাখ্যা করার কারণে জঙ্গিরা প্রশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে। তারা একের পর এক ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করছে ও ঘটনা ঘটাচ্ছে। যেসব পরিকল্পনার কথা জঙ্গিরা ধরা পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছে। তা যদি তারা বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে ভয়াবহ অবস্থা হবে। এই অভিমত বিশিষ্ট জনদের। এখন যে অবস্থা তা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে হলে যৌথবাহিনীর অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যে কোনো অপরাধ ঘটলে ও জঙ্গি হামলা হলে কিংবা জঙ্গি ধরা পড়লেই বলা হয় এটা নব্য জেএমবির কাজ। কোনো তদন্ত ছাড়াই এগুলো বলা হয়। আবার ধরার পর এরা তদন্ত যথাযথ না হওয়ার কারণে ও তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কারণে তারা জামিনে বের হয়ে আসছে। ফিরে এসে তারা আবার জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এইভাবে চলতে পারে না। এটার সমাধান প্রয়োজন। এই জন্য প্রয়োজন জঙ্গি দমনে কার্যকর বিশেষ অভিযান, সেনাবাহিনীকে এই ব্যাপারে কাজে লাগানো যেতে পারে, গোয়েন্দাদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে, কে কার আগে কৃতিত্ব নিবে এই প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। অস্ত্র উদ্ধারের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে কিভাবে বিস্ফোরক দ্রব্য জঙ্গিদের হাতে যাচ্ছে তাও বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও গোয়েন্দাদের কাছে যে সব তথ্য রয়েছে ওই সব তথ্য পর্যালোচনা করে সমন্বিতভাবে অভিযান করতে হবে। আর সেটা করা না গেলে হবে না। সেই সঙ্গে সমাজের সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এখনও হলিআর্টিজান ছাড়া বড় ধরনের হামলা জঙ্গিরা করতে পারেনি। কিন্তু না করতে পারলেও আগামী দিনে করবে না এই নিশ্চয়তা নেই। এই কারণে আগামী দিনের জন্য সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে। জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা দরকার। কিন্তু এই সব কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে তা দূর করতে হবে।
সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি দমনে কাজ করছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। এই কারণেই বারবার জঙ্গিইস্যু সামনে আসছে। কাজগুলো হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু একটা ঘটনা ঘটার পর পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের প্রধান, অভিযানের নেতৃত্বাদানকারী সবাই সবার মতো করে ব্যাখ্যা করে। নব্য জেএমবি বলে দাবি করে। এই ভাবে হবে না। এটা বন্ধ করতে হবে। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে বের করতে হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কিছু হলেই আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, সহ নব্য জেএমবির নাম বলা হয়। কিন্তু আমার প্রশ্ন কিসের ভিত্তিতে বলা হয়? একটা ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধীর সব পরিচয় জানা সম্ভব? আসলে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এইভাবে বলা ঠিক না। তারা ঘটনার পর পর বলে, আমরা পরেতো আর ওই সবের শেষ দেখি না। আসামি ধরা হলেও জামিন পেয়ে যায়। এই জামিন পাওয়ার বিষয়টিও রোধ করতে হবে। যে জঙ্গি তারা যাতে জামিনে বেরিয়ে আসেতে না পারে তা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দারা জঙ্গিদের ব্যাপারে যে তথ্য পাচ্ছে সেগুলো নিয়ে বৈঠক করে ও পর্যলোচনা করে সারাদেশে একযোগে বিশেষ অভিযান করতে হবে। যাতে জঙ্গিরা এক ইঞ্চি জায়গাও না পায় পালানোর জন্য। বিচ্ছিন্ন অভিযানে কয়েকজন ধরা পড়লেও অন্যরা রয়ে যাচ্ছে বাইরে। এই কারণে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। জঙ্গিবাদ রুখতে গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে।
অনেক দিন অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান হচ্ছে না। এটাও প্রয়োজন। হলি আর্টিজানের ঘটনায় ও সিলেটের ঘটনায় জঙ্গি দমন অভিযানে সেনাবাহিনী সাফল্য দেখিয়েছে। সেই সাফল্য বিবেচনা করেই যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে পারে সরকার। কিন্তু সেইভাবে ভাবা হচ্ছে না। বিশেষ মুহূর্তে নেওয়া হচ্ছে।
একদিকে জঙ্গিদের ধরতে হবে। জামিন পাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রায় কার্যকর করতে হবে। জঙ্গিবাদ কেবল আমাদের একার সমস্যা নয়। এই সমস্যা এখন বিশ্বব্যাপী। এই জন্য ঠেকানো কঠিন হলে শুরুতেই কঠোর হতে পারে। আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। না হলে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা বাড়তে পারে ও জঙ্গিদের তৎপরতা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে সব ঘটনা বন্ধ করতে হবে। আর চেকপোস্টে চেকিং নামে যা হচ্ছে তাতে অনেক সময় হয়রানি হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করে প্রকৃত চেক হতে হবে। সব গাড়িওয়ালা আর সিএনজি, পিকআপ চেক করে। রিক্সা কিংবা যে ব্যক্তি হেঁটে যায় তাকে তো চেক করে না। সে যে কিছু বহন করছে না সেই নিশ্চয়তা কোথায়? আসলে আরো আধুনিক ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।