সিলেটে দিনভর অভিযানে ৭৮ বাসিন্দা উদ্ধার, মাইন বিস্ফোরণে ২ পুলিশসহ নিহত ৪
আজাদ হোসেন সুমন ও আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট: সিলেটে দক্ষিণ সুরমায় আতিয়ার মহল থেকে অভিযান চালিয়ে ৭৮ জন বাসিন্দাকে উদ্ধার করেছে সেনা প্যারা কমান্ডোর সদস্যরা। কিন্তু জঙ্গিদের পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে পুলিশের ২ ইন্সপেক্টরসহ ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন আবু কাওসার ও মনির হোসেন, নিহত ২ পথচারীর পরিচয় জানা যায়নি।
গতকাল সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এক প্রেসব্রিফিংয়ে শুধু উদ্ধারের তথ্য জানিয়ে বলা হয়, অভিযান আরও চলবে। বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রায় আধ ঘণ্টাব্যাপী গুলি বিনিময়ের পর বিরতি দেওয়া হয়। এরপর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানিয়েছেন, তাদের অভিযান শেষ হয়নি। এখনো আতিয়া মহলের ভেতরে অবস্থান করছে জঙ্গিরা। এর আগে সকাল ৮টায় শিববাড়ির আতিয়ার মহলের সামনে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তারা আতিয়া মহলের চারপাশের এলাকা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং পুলিশকে অভিযানিক এলাকার বাইরে মোতায়েন করা হয়। সকাল ৯টার দিকে প্যারা কমান্ডো দলের সদস্যরা আসেন শিববাড়ি এলাকায়। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অভিযানে ছক সাজান। অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘টোয়াইলাইট’ একমাত্র সেনা সদস্যরাই এই অভিযান পরিচালনা করে। এদিকে, সকাল ১০টার পর থেকে আতিয়ার ভবনের ভেতর থেকে পরপর তিনটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ আসে। এরপর শুরু হয় গুলি বিনিময়। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময়ে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দেয় আতংক। এরই মধ্যে সেনা কমান্ডোরা শুরু করে উদ্ধার অভিযান। তারা ৫ তলা ভবনের ৫ তলা থেকেই শুরু করে উদ্ধার কাজ। এক এক করে তারা ২৯টি ফ্ল্যাট থেকে ৭৮ জন বাসিন্দাকে প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে। এর মধ্যে ৫ তলা থেকে দুই তলা পর্যন্ত আটকা পড়া বাসিন্দাদের তারা ভবনের উপর দিয়ে পাশের ভবনে নিয়ে আসেন। এরপর নিচ তলায় ফ্ল্যাটে আটকা থাকা বাসিন্দাদের মন্দিরের পাশ দিয়ে উদ্ধার করে। বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয় জঙ্গি অভিযান। এই অভিযানের সময় বেশ কয়েকটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়। এদিকে সন্ধ্যায় শিববাড়ি মাদ্রাসার সামনে একটি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৭ পথচারী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পুলিশ জানায়, অভিযানের পর তল্লাশি করা হয়েছিল। তবে লোকজন এসে ভিড় করায় হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ‘আতিয়া মহল’ থেকে ৭৮ জনকে উদ্ধার, জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে
সিলেটে ‘আতিয়া মহলে’ অভিযান। এ অভিযান কখন শেষ হবে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে এই সেনা কর্মকর্তা জানান, অভিযান কখন শেষ হবে সে বিষয়ে এখনই আমরা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না, অভিযান রাতেও চলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযানের কমান্ডার সিদ্ধান্ত নেবেন। এদিকে সেনাবাহিনীর ওই প্রেসব্রিফিং চলাকালেই ওই বাড়িতে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান বলেন, ভবনটির বিভিন্ন ফ্ল্যাটে বসবাসকারী ৭৮ জন বেসামরিক লোককে নিরাপদে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১ শিশু রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সেনা কমান্ডোরা চেষ্টা করছেন জঙ্গিদের জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করতে। উল্লেখ্য, সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমা থানার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’-এ অভিযান শুরু করেছে সোয়াত ও সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো বাহিনী। গতকাল শনিবার ভোরে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে এ জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু হয়। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেনের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে প্যারা কমান্ডো টিম। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ওই বাড়িতে একদিন অবরুদ্ধ থাকা মানুষগুলোকে বের করে আনা শুরু হয়। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের আগে বের করা হয়। তাদের মেইন রোডে নিয়ে গাড়িতে করে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর দুপক্ষের গোলাগুলি ও বিস্ফোরণে মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছে আতিয়া মহল।
আমাদের প্রতিনিধি সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসার উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখিত নিহতদের তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এডিসি মিডিয়া নিহত জেদান আল মুসা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সম্পাদনা: রফিক আহমেদ