আগামীকাল মন্ত্রিসভায় উঠছে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৭’ ১৮ বছরের আগে লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য হবে না খসড়ায় চালকদের ন্যূনতম ৮ম শ্রেণি পাস হতে হবে
আনিসুর রহমান তপন: ছয় বছরে চারবার পরিবর্তন সংস্কার শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৭-এর খসড়া। ২০১১ সালে প্রথম সড়ক পরিবহন আইন তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। গত সপ্তাহে আইনটি নীতিগত অনুমোদনের পাঠানো হয়েছে মন্ত্রিসভায়। আগামীকাল সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদিত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন খাতে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে আইনে যুক্ত করা হয়েছে বেশকিছু বিধান। পাশাপাশি চালকদের লাইসেন্স প্রদানেও কঠোর বিধান রাখা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রুট পারমিট ইস্যু ইত্যাদি কার্যাবলি বর্তমানে ‘দ্য মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিনেন্স’, ১৯৮৩ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। তবে দেশে মোটরযানের সংখ্যা ও প্রযুক্তির ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া আন্তঃরাষ্ট্রীয় ও উপ-আঞ্চলিক মহাসড়ক যোগাযোগ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে ‘দ্য মোটর ভেহিক্যাল অডিন্যান্স’ ১৯৮৩-এর স্থলে প্রয়োজনীয় বিধান সন্নিবেশ করে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী আইন বাংলায় প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) পরামর্শক আইনটির খসড়া প্রণয়ন করে। পরে এটি যাচাই-বাছাই শেষে কয়েক দফা সংশোধনের পর দুভাগে ভাগ করা হয়। একটি অংশ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আইন আকারে গত বছর চূড়ান্ত করা হয়েছে। অপরটি তিন দফা জনমত যাচাই ও সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণের পর চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে ১৩টি অধ্যায় ও ৭২টি ধারা এবং অপরাধ ও দ- সম্পর্কিত একটি তফসিল রয়েছে।
আইনটিতে লাইসেন্স প্রদানে কঠোর বিধান আরোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ৮ম শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে হবে। নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে না। এক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করলে দুই বছর কারাদ- ও পাঁচ লাখ টাকা জমিরানা। ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালককে অপরাধের ক্ষেত্রে কারা ও অর্থদ-ের পাশাপাশি দোষসূচক পয়েন্ট কাটার বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে লাইসেন্সের বিপরীতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ পয়েন্ট।
এদিকে কোনো এলাকার সড়কের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ব্যক্তি, পরিবার, এলাকা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য মোটরযানের সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে দিতে পারবে সরকার। পাশাপাশি মোটরযানের ইকোনোমিক লাইন নির্ধারণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় ও উপ-আঞ্চলিক মহাসড়ক যোগাযোগ সম্প্রসারণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিদেশ থেকে আগত যানবাহন ও চালকের জন্য সেবা প্রদানের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
তথ্যমতে, পরিবহন আইনে লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য হবে না। তবে ভারি যানবাহন চালানোর জন্য ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে। চালকের পাশাপাশি কন্টাক্টরদের লাইসেন্স নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি গাড়ি ও যাত্রীর বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কানে এয়ার প্লাগ লাগিয়ে বা মোবাইল ফোনে কথা বলা অবস্থায় গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা না মানলেও রয়েছে শাস্তির বিধান। সম্পাদনা: শিমুল মাহমুদ