‘মহান প্রায়শ্চিত্তকাল আমাদের আত্মশুদ্ধির সময়’
এলড্রিক বিশ্বাস
১ মার্চ ভস্ম বুধবার থেকে খ্রিস্টিয় ম-লিতে শুরু হয় প্রায়শ্চিত্তকালের দিন। প্রতি বছর ফিরে আসে এই প্রায়শ্চিত্তকাল। দীর্ঘ ৪০ দিন প্রায়শ্চিত্ত বা ত্যাগের মাধ্যমে খ্রিস্টিয়ানরা এ সময়টুকু পালন করে। ম-লির নিয়মের মধ্যে থেকে ধর্মীয় অনুশীলনের চর্চা করে আধ্যাত্মিক শক্তি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়। প্রায়শ্চিত্তকাল হচ্ছে আত্মশুদ্ধির সময়।
এ সময় আত্মসচেতন হওয়া, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পালন করা, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের গভীরতা বাড়ানো, নিজেকে আত্মশুদ্ধি করা, আধ্যাত্মিক স্পর্শে নিজেকে বিকশিত করা, ত্যাগ ও সেবার মনোভাবে ব্রত হওয়ার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ খ্রিস্টভক্ত হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। মনকে প্রস্তুত রাখতে হবে সবসময় যেন ঈশ্বরের নির্দেশিত পথে চলতে প্রস্তুত থাকা।
আধ্যাত্মিক অনুশীলন মানুষের মনকে করে ঈশ্বর ভীতি এবং মানুষ সকল প্রকার অন্যায্যতা, অপকর্ম থেকে বিরত থাকে। সবসময় ঈশ্বরকে স্মরণ করে। প্রাত্যহিক প্রার্থনা জীবনে স্থান পায়। এজন্য একজন ধর্মভীরু মানুষ সবসময় প্রস্তুত থাকে ঈশ্বরকে স্তুতি ও ধন্যবাদ জানাতে।
খ্রিস্টভক্তদের সবসময় প্রস্তুত থাকা উচিত ঐশ্ব জগতের জন্য। আমরা সবসময় মনে করি জীবনের আরও অনেক সময় আছে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য। তার প্রশংসা করার জন্য। কিন্তু আমাদের জীবনে প্রতিটি দিনই প্রস্তুতির দিন, ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের দিন। যীশু খ্রিস্টের উপর অগাধ বিশ্বাস ও তার বাণী পালনের মাধ্যমে আমরা হতে পারি খ্রিস্টের একান্ত অনুসারী।
আমাদের এই সীমাবদ্ধ ও ক্ষণিকের জীবনযাত্রায় জীবনধারা অবশ্যই হওয়া উচিত খ্রিস্টপ্রেম ভিত্তিক। তাহলে আমাদের জীবনে সকল অনৈতিকতা কেটে গিয়ে খ্রিস্টের বাণীকে আমরা অন্তরে স্থান দিতে পারব। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে যেকোনো সময় সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের ডাক শোনার জন্য। আধ্যাত্মিক অনুশীলন মানুষের মনকে করে ঈশ্বরভীতি এবং মানুষ সকল প্রকার অন্যায্যতা, অপকর্ম থেকে বিরত থাকে। সবসময় ঈশ্বরকে স্মরণ করে। প্রাত্যহিক প্রার্থনা জীবনে স্থান পায়। এজন্য একজন ধর্মভীরু মানুষ সবসময় প্রস্তুত থাকে পিতা ঈশ্বরকে স্তুতি ও ধন্যবাদ জানাতে। আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য কি! সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করা, তার স্তুতি করা, যীশু খ্রিস্টেতে বিশ্বাস ও তার বাণী বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। এবাবে আমরা এ জগতের রাজ্য থেকে ঐশ্ব রাজ্যে প্রবেশের পথ সুগম করতে পারি। পবিত্র বাইবেল বলে- ‘খ্রিস্টের সঙ্গে যদি আমরা মরে থাকি, তবে তার সঙ্গে আমরাও জীবিত থাকব।’ তিমথি : ২:১১ পদ।
মানুষ মরণশীল। এ জগতে অমরত্বের দাবিদার কেউ হতে পারবে না। একমাত্র মানবজাতির মুক্তিদাতা প্রভু যীশু খ্রিস্ট মৃত্যুর পর পুনরুত্থান করে চল্লিশদিন পৃথিবীতে থেকে প্রমাণ করেছেন তিনিই মৃত্যুঞ্জয়ী। মানুষকে একদিন মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শ পেতে হবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় এ জগৎকে নিয়ে লিখেছেন ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি, বাঁচিবারে চাই।’
মানুষ চায় বহুদিন যেন সে এ জগতে বাঁচতে পারে। মানুষ বাঁচার আকাক্সক্ষায় খাওয়া দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করাসহ শারীরিক করসত, বিশ্রাম ও নানাবিধ কর্মসূচি ও নতুন নতুন চিন্তা নিয়ে বেঁচে থাকার মহান ব্যর্থ দায়িত্ব পালন করে চলছে। স্বয়ং খ্রিস্ট যীশু আমাদের জন্য বাণী রেখেছেন- ‘আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমার উপর বিশ্বাস করে, সে মরলেও জীবিত হবে’। যোহন ১১:২৫-২৬ পদ। আমরা দেখি স্বাভাবিক মৃত্যু ও অস্বাভাবিক মৃত্যু। স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের, বেশি কষ্ট দেয়। কিভাবে মৃত্যু হতে পারে। স্বাভাবিক মৃত্যু, বয়স হয়ে মৃত্যু, অসুখ হয়ে মৃত্যু, হঠাৎ মৃত্যু (স্ট্রোক) এছাড়া এক্সিডেন্ট, অপমৃত্যু, আন্দোলনে দেশের জন্য মৃত্যুসহ আমাদের জন্য ঈশ্বরের কি পরিকল্পনা আছে তা আমরা জানি না। আগামীকাল মানুষের জন্য ঈশ্বরের কি চিন্তা তা মানুষ জানে না। মানুষ কি সৃষ্টিকর্তাকে সব সময় স্মরণ করতে প্রস্তুত? সাধারণ মৃত্যুর গ্যারান্টি সকলেই চায় যেহেতু মরণশীল মানুষকে একদিন এ জগতের মায়া ত্যাগ করতে হবে সেহেতু প্রতিটি মানুষের উচিত সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা। পবিত্র বাইবেল বলে, ‘টাকা পয়সা, জমি-জমা, সৌন্দর্য ও ভোগ বিলাসিতা এখন আর কাজের নয়। তারা সবই ছেড়ে গেছেন; সঙ্গে শুধু নিয়েছেন তাদের কর্মফল, স্বর্গসুখ নয় শান্তি।’ প্রত্যাদেশ ১১:১৩ পদ
‘যারা প্রভুকে জেনে ও প্রভুতে বিশ্বাসী হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তাদের জীবন অমরত্বে পূর্ণ, তাদের পুরস্কার তারা পাবেই অনন্তধামে।’ প্রজ্ঞা ৩:১ পদ।
শেষ কথা, আমাদের সকলেরই ব্যক্তি জীবনে আছে অহংকার, লোভ, ক্ষোভ, রাগ, ক্ষমতোার প্রতিপত্তি আরও অনেক কিছু, আছে টাকা পয়সা ও সম্পদের প্রাচুর্যময় জীবন এবং প্রতিনিয়ত যে যেই অবস্থান আছি তার থেকে আরও উন্নতিতে ও উৎকর্ষতায় জীবনকে সুন্দর করার অবিরাম প্রয়াস। কিন্তু যেদিন ঈশ্বরের ডাকে এ জগতের মায়া ত্যাগ করতে হবে সেদিন সকল দম্ভ ও সম্পদের প্রতিপত্তি থেকে যাবে শুধু আমাদের এ নশ্বর দেহটি মাটির ঘরে স্থান পাবে। অনেকে কান্না করবে বেদনার্ত হবে তাও একদিন শেষ হবে। তবুও কথা থেকে যায়, জীবদ্দশায় আমাদের আচরণ, কাজের স্বীকৃতিই মৃত জীবনে নিয়ে বয়ে বেড়ায় নানা কথা- সেই কথার বেড়াজালে যেন একটি কথা প্রাধান্য পায় যে কথা আমাদের জীবদ্দশার স্মৃতিকে বারংবার জন্য, খ্রিস্টের বাণীকে অন্তরে স্থান দেওয়ার জন্য, বাণীকে কাজে পরিণত করার জন্য। কথাটি কি যা লোকমুখে বলাবলি হবে (মৃত লোকটি) ‘একজন ভাল লোক ছিলেন’।