আতিয়া মহলে ২ জঙ্গি নিহত অপারেশন ‘টোয়াইলাইট’ চলবে : ব্রি.জে. ফখরুল আহসান
আজাদ হোসেন সুমন ও আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট: টানা তিনদিন ধরে জঙ্গি অভিযান মিশন চলছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলকে ঘিরে। বিগত তিনদিনেও এ অভিযান শেষ হয়নি। তবে গতকাল বিকালে প্যারাকমান্ডোর কাউন্টার এ্যাটাকে ২ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন। জঙ্গিবিরোধী অপারেশন টোয়াইলাইট চলাকালে জঙ্গিদের সঙ্গে সেনা সদস্যদের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। সেনাদের লক্ষ্য করে জঙ্গিরা গুলি ছুঁড়েছে। গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে আতিয়া মহল থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। গতকাল বেলা সোয়া ২টার দিকে আতিয়া মহলে বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটে। এর পরপরই এক সেনা সদস্যকে আহত অবস্থায় ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়। এই ঘটনার মিনিট দশেক পর আরেক সেনা সদস্যকে আহত অবস্থায় বের করে নিয়ে আসেন মেডিকেল কোরের সদস্যরা। এসব ঘটনায় গোটা সিলেটেই আতঙ্ক দেখা দেয়। সিলেট নগরীর বাসিন্দারা রীতিমত আতঙ্কিত। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না। তারা উপরোক্ত ঘটনায় আতঙ্কের পাশাপাশি স্তম্ভিতও। সিলেট নগরীর একপাশে শিববাড়ি। পাশেই শিব মন্দির। জনাকীর্ণ এলাকা। আর এই এলাকায় জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে আছে এমনটি স্থানীয়রা কল্পনাও করতে পারেননি। পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা মিন্টু এ ঘটনায় হতবাক। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ স্তম্ভিত। তারা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি এত বড় জঙ্গি আস্তানা এই শিববাড়িতে। এই এলাকার যারা বাসা ভাড়া দেন তারা যেন সব তথ্য রেখে যাচাই-বাছাই করে ভাড়া দেন এ অনুরোধ জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন টোয়াইলাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে আতিয়া মহল ঘিরে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত শুক্রবার ঢাকা থেকে সোয়াট এসে যোগ দেয়, এরপর যোগ দেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার পাঠানপাড়া সড়কের পাশে অবস্থিত পাঁচতলা ও চারতলাবিশিষ্ট দুটি ভবনের নাম আতিয়া মহল। সিলেট নগরীর আতিয়া ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির বান্দরঘাটের (বন্দরঘাট) বাসিন্দা উস্তার মিয়া। এই বাড়িতে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে এমন সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ। গত শুক্রবার দিনভর পুলিশ সোয়াট ও সেনাসদস্যরা বাড়িটিকে ঘিরে রাখে। এসময় হ্যান্ডমাইকে করে বারবার সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। তবে এতে সাড়া মেলেনি। অবশেষে বাড়িটি ঘিরে রাখার প্রায় ত্রিশ ঘণ্টা পর চূড়ান্ত অভিযানে নামে সেনা সদস্যরা। অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথমে আতিয়া মহলের অন্য ফ্ল্যাটগুলোতে আটকে পড়াদের উদ্ধার করা হবে। পরে জঙ্গিদের ভবনের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। ভবন মালিক জানিয়েছেন, পাঁচ তলা ভবনটিতে ৩০টি ফ্ল্যাটে মোট ২৮টি পরিবার ভাড়া থাকেন। এই ভবনের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন গত জানুয়ারি মাসে প্রাণ কোম্পানির অডিট অফিসার পরিচয়ে কাওসার আহমদ ও মর্জিনা বেগম দম্পতি। ওই ফ্ল্যাটটিকে ঘিরেই চলছে টানা তিন দিনের অভিযান। প্যারাকমান্ডোর অপারেশনে গত শনিবার যে ২ জঙ্গি নিহত হয়েছে। তারা ২ জনই পুরুষ। ধারণা করা হচ্ছে ভবনের ভেতরে এখনো এক নারী জঙ্গিসহ কমপক্ষে ৩ জঙ্গি অবস্থান করছেন। সম্পাদনা: রফিক আহমেদ