৬০ ঘণ্টার অভিযানেও জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করেনি
আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট: ৬০ ঘণ্টার অভিযানেও জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করেনি। সেনা সদস্যরাও থেমে নেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাণপনে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব ঘটনায় গোটা সিলেটেই যেন আতঙ্ক নেমে এসেছে। সিলেট নগরীর বাসিন্দারা রীতিমত আতঙ্কিত। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঘরের বাইরে যাচ্ছে না। এ ঘটনায় আতঙ্কের পাশাপাশি স্তম্ভিতও তারা। সিলেট নগরীর একপাশে শিববাড়ি। পাশেই শিব মন্দির। জনাকীর্ণ এলাকা। আর এই এলাকায় জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে আছে এমনটি স্থানীয়রা কল্পনাও করতে পারেননি। পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা মিন্টু এ ঘটনায় হতবাক। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ স্তম্ভিত। তারা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি এত বড় জঙ্গি আস্তানা এই শিববাড়িতে। এই এলাকার যারা বাসা ভাড়া দেন তারা যেন সব তথ্য রেখে যাচাই-বাছাই করে ভাড়া দেন এ কথা জানান তিনি। এদিকে, শিববাড়ি জঙ্গি আস্তানায় ছুটে যাচ্ছেন সিলেটের রাজনৈতিক দলের নেতারাও। গত তিন দিনে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তারাও এ ঘটনায় হতবাক। আর গত শনিবার দুই ইন্সপেক্টর নিহতের ঘটনায় তাদের চোখেও জল। সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জানিয়েছেন, কী বলবো। এক সঙ্গে ছয়জন মানুষের মৃত্যুতে সিলেটবাসী শোকে শোকাহত। যে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন তারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য মারা গেছেন। তিনি সিলেট নগরবাসীকে ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য অনুরোধ জানান। শিববাড়ি জঙ্গি আস্তানা দেখতে গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ দলে দলে এসেছে। কিন্তু জঙ্গি আস্তানার বাইরে পুলিশি ব্যারিকেডের সামনে পরপর দুটি বোমা বিস্ফোরণে আতঙ্ক নেমে এসেছে। এ কারণে ওই আস্তানায় দেখতে গতকাল স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা ছিল খুব কম। এখন কোথায় বোমা বিস্ফোরিত হয় সেটি কেউ বলতে পারে না। স্থানীয়রা জানান, শিববাড়ি জঙ্গি আস্তানায় জঙ্গিদের একটি টিম অবস্থান করছে সেটি তারা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাননি। মসজিদেও তাদের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়নি। তবে কয়েক দিন ধরে এলাকায় অচেনা-অজানা লোকদের আনাগোনা ছিল বলে জানান তারা। শিববাড়ি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, আতিয়ার মহলের কাছাকাছি তাদের দোকান। ওই মহলে প্রায় ৩০টি পরিবার বসবাস করে। শতাধিক লোকের বাস ওখানে। সুতরাং, যারা কয়েক বছর ধরে বাসায় বসবাস করছেন তাদের সঙ্গে সবার পরিচয় আছে। কিন্তু যারা নতুন ভাড়াটিয়া আসেন তাদের অনেককেই তারা চিনেন না। জঙ্গিদের অবস্থান তাদের দৃষ্টিতে পড়েনি। তবে ইদানিং নতুন লোকদের বিচরণ ছিল বেশি। শিববাড়ি জঙ্গি আস্তানার কথা এখন সিলেটবাসীর মুখে মুখে। সবাই পর্যবেক্ষণে বিষয়টি। ঘটনার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে। অনেকেই বলছেন, শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানায় অভিযান সিলেটের সবচেয়ে বড় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পরিণত হয়েছে। আগে কখনও এত বড় জঙ্গি আস্তানার খোঁজ মিলেনি শান্তির জনপদ সিলেটে। সম্পাদনা: রফিক আহমেদ