আমদানি কমে আসায় বাজার নিয়ন্ত্রণে মিলাররা আরেক দফা বাড়ালো চালের দাম
জাফর আহমদ: আরেক দফা চালের দাম বেড়েছে। গত তিন মাসের ব্যবধানে দু’দফায় প্রায় পাঁচ টাকা বাড়লো চালের দাম। ঢাকার আড়ৎদাররা বলছেন সামনে ধান কাটার মৌসুম। এখন কৃষকের কাছে ধান নেই। এ সুুযোগ বুঝে মিল মালিকরা চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। চালের দাম বেড়েছে স্থান ভেদে ৫০ পয়সা থেকে শুরু করে ২ টাকা পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপ করাতে চাল বাজারের একক নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে মিলাররা। সুযোগ বুঝে তারা দাম বাড়াচ্ছে।
গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, প্রতিকেজি ভালমানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৫৪ টাকা পর্যন্ত। মধ্যম মানের চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ধরন ভেদে ৪৪ টাকা পর্যন্ত। এ ব্যাপারে রাজাবাজারের চাল বিক্রেতা আলী আজগর জানান, মোকামে চালের দাম বেড়েছে-এ কারণে আমরা চালের দাম বেশি নিচ্ছি। কেন চালের দাম বাড়ানো হলো-এমন প্রশ্নের জবাবে আজগর আলী জানান, কয়েকদিনের মধ্যে মিলারদের হালখাতা। তারা নতুন করে বাকীতে চাল সরবরাহ করছে না। এতে সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। কেন মোকামে চালের দাম বেড়েছে জানেন না মিরপুরের দোকানদাররা।
এদিকে, অগ্রহায়ণের শেষের দিকে প্রথম দফা চালের দাম বাড়ে। তখন বাজারে কেজি প্রতি এক থেকে দুই টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এবার চালের দাম বৃদ্ধি পেয়ে এলাকা ভেদে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকাতে উঠেছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা।
চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে মানুষের খাদ্যাভ্যাস দায়ী করেন বাদামতলী ও বাবুবাজার চাউল আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, চিকন চালের দিকে মানুষের ঝোঁক বেড়েছে। এ কারণে চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু প্রয়োজন মতো সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই চিকন চাল হয় এমন ধান একটি মাত্র মৌসুমে উৎপাদন হয়। ১১ মাস আগে চিকন চাল উঠেছে; নতুন ধান উঠতে এখনও ২০-২৫ দিন সময় লাগবে। ততদিনে চালের বাজার একটু উর্ধ্বমুখী থাকবে। তবে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।
বিআইডিএসের সমীক্ষা-২০১২ অনুযায়ী জনপ্রতি দৈনিক চালের চাহিদা প্রায় ৪৬২ গ্রাম ও গমের চাহিদা প্রায় ৪৬ দশমিক ২১ গ্রাম। সে হিসেবে মোট খাদ্যশস্যের চাহিদা প্রায় দুই কোটি ৯৩ (চাল ও গম) লাখ মেট্রিক টন। দেশে খাদ্যশস্যের (চাল ও গম) উৎপাদন প্রায় ৩ কোটি ৮ লাখ মেট্রিক টন। উক্ত হিসাব অনুযায়ী খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু প্রতিবছর বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আদমানি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে চাল আমদানি হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। একই সময়ে গম আমদানি হয়েছে ৩০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন; একই সময়ে গম আমদানি হয়েছে ৩৭ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন এবং গম আমদানি হয়েছে ২৭ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশে বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি চাল আমদানি হওয়ার কারণে ক্রাইসেস সময়ে চালের দাম খুব এটা বাড়েনি। সম্প্রতি চালের উপর শুল্ক বসানোর ফলে আমদানিকারকরা চাল আমদানি এক-দশমাংশে নামিয়ে দিয়েছে। ফলে চালের বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে মিলারদের কাছে। চাল আমদানি অব্যাহত থাকলে চালের এই ক্রাইসিসের সময়টিতে আমদানিকাকররা চাউল বাজারে ছাড়তো। ফলে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল থাকতো। এমনটাই মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জা এবিএম আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন, জনসংখ্যা ও চাহিদার সঠিক তথ্যের অভাব রয়েছে। একারণে যেমন বাজারে চালের ঘাড়তি সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সুযোগে বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু সঠিক হিসেব নেই সে কারণে চাল আমদানির উপর এই শুল্ক বসানোটা ঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে রাজধানীতে খোলা ট্রাকে ১৭ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করলেও গ্রাহকের উপস্থিতি কম। সরকারের নিজস্ব সংগ্রহ থেকে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টসহ বিভাগীয় শহরে এ চাল বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে চালের এ দামে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। সম্পাদনা : রফিক আহমেদ