জঙ্গি নির্মূল করে দেশ গড়ার আহ্বান
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূল করে দেশ গড়ার অঙ্গীকারে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রবাসে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়েছে। প্রবাসে মহান স্বাধীনতা দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, ওয়াশিংটন দূতাবাস, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেট, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টি, নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফোরাম, বিয়ানীবাজার সমিতিসহ প্রবাসের বিভিন্ন সামাজিক ও আঞ্চলিক সংগঠন। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার সিটি প্লাজায় এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করে। অন্যদিকে স্থায়ী মিশন, কনস্যুলেট ও কংগ্রেস অব বাংলাদেশি আমেরিকান ইনক এলেমহার্স্ট হাসপাতালে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে।
এনা জানায়, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০১৭ উদযাপন করেছে গত ২৬ মার্চ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সকাল ৯টায় স্থায়ী মিশনে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর সকাল ১০টায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল ও কংগ্রেস অব বাংলাদেশি আমেরিকান ইনক্ যৌথভাবে স্থানীয় এলেমহার্স্ট হাসপাতালে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি আয়োজন করে। মিশন ও কনস্যুলেটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও স্থানীয় প্রবাসী বাঙালিরা এই কর্মসূচিতে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।
বেলা ২টায় স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে পুনরায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু করা হয় মূল আলোচনা অনুষ্ঠান। এ সময় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের স্মরণে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাগণ জাতির পিতার প্রকৃতিতে সম্মিলিতভাবে সশ্রদ্ধ সালাম প্রদর্শন করেন। মূল আলোচনার আগে দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। আলোচনা পর্বের শুরুতে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
স্বাগত বক্তব্যে স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোনের স্বাধীনতার জন্য বাঙালির সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব-কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ ধারণ করেই পররাষ্ট্রনীতির বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি’। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে মর্মে উল্লেখ করে প্রবাসীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রদূত বলেন, আপনারা রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছেন। প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশের মাটিতে দেশের শুভেচ্ছাদূত। আপনারা আপনাদের কাজ ও ব্যবহারের মাধ্যমে প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখবেন। জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ায় আরও ভূমিকা রাখবেনÑ এটাই আমার প্রত্যাশা। নিউইয়র্কস্থ কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান বলেন, একাত্তরের শহীদদের রক্ত আর মা-বোনের সম্ভ্রম বৃথা যায়নি। বাংলাদেশ আজ শুধু আঞ্চলিক পর্যায়েই নয়, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, আর এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে। তিনি প্রবাসী কমিউনিটিকে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরও অবদান রাখার আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আসুন দলমত নির্বিশেষে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে সকল প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক একযোগে কাজ করে জঙ্গি নির্মূল করিÑ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। অনুষ্ঠানটিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিকর্মী, নাট্যকার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতা-কর্মীসহ জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ ও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটিতে স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয়। বাংলাদেশ সোসাইটির স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান ব্রুকলিনের পিএস ১৭৯ স্কুল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। গেস্ট অর্নার ছিলেন ব্রুকলিনের ডিস্ট্রেক্ট অ্যাটর্নি এখি গাঞ্জালেস, কাউন্সিলম্যান বব ভেন্ডার। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ফখরুল আলম, জয়নাল আবেদীন, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি, এমদাদুল হক কামাল, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক খায়ের, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, নাদের এ আইয়ুব, নওশেদ হোসেন, নাসির উদ্দিন আহমেদ, কামাল ভূইয়া, আহসান হাবীব, রিজু মোহাম্মদ, সাদী মিন্টু, আজাদ বাকির প্রমুখ।সম্পাদনা: শিমুল মাহমুদ