প্রয়োজন মেধার নার্সিং
জি কে সাদিক
দেশকে উন্নত করতে হলে সে দেশের প্রত্যেক স্তর থেকে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতি ও তথ্য-প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রেই সমভাবে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন মেধাবী তরুণদের মধ্য থেকে সৃজনশীলদের জন্য তাদের মেধার আলোকে নার্সিং করা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতি ও তথ্য-প্রযুক্তিসহ প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে মেধার আলোকে তাদের জন্য একটা জায়গা তৈরি করা এবং আগামী দিনের জন্য যোগ্য পথনির্দেশক তৈরি করতে হবে। বিজ্ঞানের এই যুগে যুগোপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করে তাতে মেধাবীদের জন্য গবেষণা ও মেধা বিকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিতে হবে। দেশে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার একটা বড় কারণ হলোÑ দারিদ্র্যতা ও পারিবারিক সমস্যা। এই দুটো সমস্যা থেকে যদি শিক্ষার্থীদের মুক্ত করা যায় তাহলে দেশে মেধার বিপ্লব ঘটবে। প্রত্যেকটা জিনিস যদি যথাযথ কাজে লাগানো না যায় এবং সেটা বিপথে পরিচালিত হয় তাহলে তার পরিণাম হয় ভয়াবহ। শিক্ষা-সাংস্কৃতি, সমাজ-রাজনীতি, কৃষি-অর্থনীতিসহ যে যে ক্ষেত্রে কাজের জন্য উপযোগী বা কাজ করতে পারবে তাকে সে কাজের জন্য পরিচর্যা করে গড়ে তোলা হলে সব ক্ষেত্রে আমরা মজবুত ভিত্তি সহকারে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারব এবং প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে উন্নয়নের ভিত্তি হবে সুদৃঢ়। এর জন্য কারিগরি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে এবং সরকারি ও বেসরকারিভাবে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে গবেষণা ও কারিগরি শিক্ষাকে সহজলভ্য করতে হবে। দারিদ্র্যতার জন্য শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া সংবাদ আমরা প্রায়ই গণমাধ্যমগুলোতে পাই। অনেকে আবার উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধার জোরে স্থান পেলেও অর্থের অভাবে তার স্থানে টিকে থাকতে পারে না। এই ঝরে পড়া উন্নয়ন ঝরে পড়ার নামান্তর। তাই এই ঝরে পড়ার প্রবণতা রোধ করতে হবে।
তরুণদের মেধার সুফল পেতে হলে আমাদেরকে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে কাজ করতে হবে। ঝরে পড়ার মূল কারণ বের করে তা প্রতিরোধ করতে হবে। তুলনামূলকভাবে আমরা গ্রাম এবং শহরের মাঝে সকল দিক থেকে একটা বড় ধরনের পার্থক্য দেখতে পাই। দেশের মোট জনসংখ্যার বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। তাই গ্রাম এলাকার মেধাবী তরুণদের জন্য গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়া রোধ করতে হবে। গ্রামের যুবকদের জন্য গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সময়োপযোগী কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং গ্রামে শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে। মেধাবী ও সৃজনশীলদের বের করতে হবে। এর মধ্য থেকে যাদেরকে যে পর্যায়ে কাজে লাগালে সুফল লাভ করা সম্ভব তাদের জন্য সে ব্যবস্থা করতে হবে।
উচ্চশিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো, প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ প্রত্যেকটা স্তরে মেধার অন্বেষণ করতে হবে এবং মেধার প্রতি যতœবান হতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এখনো শিক্ষার সুযোগ পর্যাপ্ত পরিমাণে নয় এবং তাদের জীবনযাত্রার মানও খুব বেহাল দশা। এটা কোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্য কাম্য নয়। তাই তাদের মাঝে শিক্ষা গ্রহণের প্রবণতাকে আরও বৃদ্ধি করা জরুরি। তাদের মেধাও হবে আমাদের উন্নয়নে একাংশ। সর্বস্তরে শিক্ষার্থীদের নতুনত্বে প্রতি আগ্রহকে বাড়িয়ে তুলতে হবে। তাদের চিন্তাশক্তিকে বিকশিত করার সুযোগ করে দিতে হবে। চিন্তা জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। মনে রাখতে হবে, মেধা যখন কোনো স্থানে জায়গা না পায় তখন সে স্থান দখল করে মেধাহীন। এমন হলে আমাদের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়তে সময় মাত্র। মেধাবীরা দেশ ও জাতির সম্পদ। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক সব মতভেদের ঊর্ধ্বে মেধার স্থান। তাই সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে এসে মেধাকে পরিচর্যা করতে হবে ও সার্বিকভাবে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। মেধার নার্সিং ও বিকাশ ঘটাতে হলে জ্ঞানচর্চার অবাধ ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। বেশি বেশি পাবলিক লাইব্রেরি, গবেষণাগার, গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নানাবিধি শিক্ষামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তার সঠিক পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞানচর্চার বিস্তর ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। পরীক্ষার প্রতি যতটা গুরুত্ব আমরা দিই তার চাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মুক্ত জ্ঞানচর্চার দিকে। শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও সহজলভ্য করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে, চির উন্নত শিরে দাঁড়াতে হলে মেধার জোরেই দাঁড়াতে হবে। (শেষ)
লেখক: প্রবন্ধকার ও কলাম লেখক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
সম্পাদনা: আশিক রহমান