আল্লাহকে ভয়ের প্রতিদান
মোস্তফা কামাল গাজী
একদিন রাসুলুল্লাহ (সঃ) সাহাবায়ে কেরামদের (রাঃ) নিয়ে বসে আছেন। তখন তিনি বললেন, ‘সোনা-রূপার মালিক যদি এর হক (জাকাত) আদায় না করে, কিয়ামতের দিন তার জন্য অনেকগুলো পাত তৈরি করা হবে। সেগুলো জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। ঠা-া হলে আবার গরম করা হবে। সেই দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। সকলের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এ শাস্তি চলতেই থাকবে। এরপর সে তার পথ ধরবে হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।’
কেউ জিজ্ঞেস করলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সঃ), উটের জাকাত না দিলে কী শাস্তি হবে?’ তিনি বললেন, ‘উটের মালিক জাকাত আদায় না করলে, কিয়ামতের দিন বিশাল এক ময়দানে তাকে উপুড় করে শোয়ানো হবে। তার সকল উট বাচ্চাসহ তাকে ক্ষুর দিয়ে মাড়াতে থাকবে এবং মুখ দিয়ে কামড়াতে থাকবে। এভাবে যখনই তাদের প্রথম দল অতিক্রম করবে, শেষ দল এসে পৌঁছবে। এরূপ করা হবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যতোক্ষণ না আল্লাহর বান্দাদের বিচার শেষ হয়। এরপর সে তার পথ জান্নাত বা জাহান্নামের দিকে দেখতে পাবে।
কেউ জিজ্ঞেস করলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সঃ), গরু ও ছাগলের জাকাত আদায় না করলে কী শাস্তি হবে?’ তিনি বললেন, ‘গরু ও ছাগলের জাকাত আদায় না করলে, কিয়ামতের দিন তাকে এক ধুধু প্রান্তরে উপুড় করে ফেলা হবে। তার সকল গরু, ছাগল তাকে শিং দিয়ে আঘাত করতে থাকবে এবং ক্ষুর দিয়ে মাড়াতে থাকবে। তখন তার একটি গরু, ছাগলও শিংহীন বা শিংভাঙা হবে না। যখন প্রথম দল অতিক্রম করবে, তখনই শেষ দল এসে পৌঁছবে। এরূপ করা হবে সে দিন, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যতোক্ষণ না আল্লাহর বান্দাদের বিচার শেষ হয়। এরপর সে তার পথ হয় জান্নাতে, না হয় জাহান্নামে দেখতে পাবে।
ফের কেউ জিজ্ঞেস করলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সঃ), ঘোড়ার জাকাত না দিলে কী শাস্তি হবে?’ তিনি বললেন, ‘ঘোড়া তিন প্রকার। ১. ঘোড়া কারোর পাপের কারণ ২.কারোর আবরণ স্বরূপ, ৩. কারোর জন্য আবার সওয়াবের জিনিস। যে ঘোড়া তার মালিকের পাপের কারণ তা হলো, যে এটিকে পালন করেছে লোক দেখানো ও মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার উদ্দেশ্যে। যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে আবরণ স্বরূপ তা হলো, যে এটিকে পালন করেছে আল্লাহর জন্য এবং এর ওপর আল্লাহর হক সম্পর্কে ভুলেনি। এটি তার মান-সম্মানের জন্য আবরণ স্বরূপ হবে।
আর যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য সওয়াবের কারণ তা হলো, যে তাকে পালন করেছে কোন পতিত চারণভূমিতে। তার নিয়ত ছিলো মুসলমানদের দেশ রক্ষা করা। সে ঘোড়া চারণভূমির যা কিছু খাবে, সে পরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। এর গোবর ও প্রস্রাব পরিমাণ নেকিও লেখা হবে। ঘোড়া যদি রশি ছিঁড়ে একটি অথবা দু’টি মাঠ বিচরণ করে, তাহলে তার পদচিহ্ন ও গোবর পরিমাণ সওয়াব তার জন্য লেখা হবে। এমনকি মালিক এটিকে কোন নদীর কাছে নিয়ে যাওয়ার পর তার ইচ্ছা ছাড়াই নদীর পানি পান করলে, ঐ পানি পরিমাণ নেকি তার জন্য লেখা হবে।’
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ফের জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সঃ), গাধার ব্যাপারে কী শাস্তি হবে?’ তিনি বললেন, ‘গাধার ব্যাপারে আমার ওপর শুধু এই আয়াতটি নাজিল হয়েছে, ‘কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সেদিন তা দেখতে পাবে। কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও দেখতে পাবে’ (জিলজাল:৭-৮)।’(মিশকাত:১৭৭৩)