উম্মতে মুহাম্মদীর নেয়ামত ‘হাউজে কাউসার’
শাইখুল হাদিস মাওলানা আব্দুস সামাদ
হাশরের ময়দান। সকল মানুষের হিসাব নিকাশের দিন। পিপাসা কাতর মানুষ। পিপাসায় কলিজা পুড়ে যাবে, তৃষ্ণায় জ্বলে যাবে অন্তর। এমন পিপাসার্ত মানুষ আর কখনো হয়নি। সে সময় উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য হাউজে কাউসার নিয়ে হাজির হবেন নবী মুহাম্মদ সা.। আল্ল্াহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবী মুহাম্মদ সা. এর জন্য এ এক বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা। উম্মতদের হাউজে কাউসারের পানি পান করারনোর জন্য ডাকবেন নবী সা.।
হাশরের মাঠে, কেয়ামত দিবসে হিসাবের সময় মুহাম্মদ সা. এর উম্মতরা হাউজে কাউসারের পানি পান করবেন। সে দিনটি কাফেরদের কাছে ৫০ হাজার বছরের পরিমাণ দীর্ঘ হবে, আর মোমিনদের জন্য আল্লাহ তায়ালা তা সহজ করে দেবেন। সেদিনের নেয়ামত হাউজে কাউসারের পানির গুণাগুণ অনেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে সূরা কাউসারে স্পষ্ট করে এ নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে । আল্লাহ তায়ালা তার বন্ধুকে হাউজে কাউসারের সম্মান দান করেছেন বলে ঘোষণা করেন। ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি।’ (সূরা কাউসার) আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. এর হাউজ তার শরিয়তের মতোই বিশাল, সর্বাধিক উম্মতে ঘেরা । রাসুল সা. বলেন, ‘নিশ্চয় আমার হাউজ আইলা ও আদান (দুটি স্থানের নাম) এর দূরত্ব থেকেও বিস্তৃত ও দীর্ঘ।
এর পানি দুধের চেয়েও সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি এবং বরফের চেয়েও ঠান্ডা। আর এর পানপাত্র তারকার সংখ্যার চেয়েও অধিক।’ (মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এর পানি মেশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধি’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার জীবন যার হাতে সেই সত্তার কসম, হাউজে কাউসারের পানপাত্রগুলো অন্ধকার রাতের আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। জান্নাতের পাত্র, যে তা থেকে পান করবে পরে সে আর পিপাসার্ত হবে না। জান্নাত থেকে দুইটি নালা দিয়ে এতে পানি প্রবাহিত হবে।’ (আহমাদ, মুসলিম ও নাসায়ি)।
রাসুল সা. এর সুন্নতের অনুসারী, তাঁর পথ ও মতের ধারক বাহকরাই তাঁর কাছে হাউজের পাশে অবস্থান গ্রহণের সুযোগ পাবে। আর তারা, যারা কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে ছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা কবিরা গোনাহ তা থেকে বিরত থাকলে আমি তোমাদের ছোট গোনাহগুলো ক্ষমা করব এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব।’ (সূরা নিসা : ৩১)। হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করার আরও কারণের মধ্যে রয়েছে, রাসুল সা. এর ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ শরিফ পাঠ করা।
আমল এবং এর প্রতিদানের মাঝে একটা সুন্দর মিল রয়েছে। যে দুনিয়ায় নবীর শরিয়তের অনুসরণ করবে, তাঁর পথ ও মতকে আঁকড়ে ধরবে এবং এর ওপরই মৃত্যুবরণ করবে, সে তার আমলের প্রতিদান হিসেবে হাউজে কাউসারে উপনীত হবে। আর যে দ্বীনের মাঝে পরিবর্তন করবে, বেদাত করবে সে সত্যবিমুখ হওয়ার করণে বাধাগ্রস্ত ও বঞ্চিত হবে। হাউজে কাউসারের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। যে হাউজে কাউসারের প্রতি ঈমান রাখবেন না তার ঈমান থাকবে না। লেখক : চেয়ারম্যান, সারফ ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানী বাংলাদেশ