সমাজ সংস্কারে মহানবী সা.
মাহমুদুল হক জালীস
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আদর্শ অনুযায়ী জীবন-যাপন করা মুমিনের কাম্য। অর্থাৎ ব্যক্তি ও পরিবার থেকে সমাজিক ও জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরে তথা সমগ্র মানবজীবনে ইসলামের বিধানকে বাস্তবায়িত করা । হযরত মুহাম্মদ (সা.) জাহেলী যুগের অধঃপতিত সমাজ ব্যবস্থাকে শাশ্বত কর্মসূচীর মাধ্যমে পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। তার সংস্কারগুলোর মধ্যে ছিল, ১ জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া। মানুষ নিজ সত্ত্বা সম্পর্কে প্রায়শ ভুল ধারণা পোষণ করে । কেউ নিজেকে মনে করে সর্বক্ষমতার অধিকারী । আবার কেউ নিজেকে সামান্য গাছ-পালা, পশু-পাখির চেয়েও তুচ্ছ মনে করে । হযরত মুহম্মদ (সা.) সেইসব ভুল ধারণা নিরসন করে, মানুষের জীবনের ব্যস্ততা ও সার্থকতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলেন । ২. সাম্যও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা। জীবন সম্পর্কে ধারণায় ত্রুটি থাকায় মানুষের মাঝে সাম্যও ভ্রাতৃত্ববোধ বলতে কিছুই ছিলো না । যার ফলশ্রুতিতে এক গোত্রে আর এক গোত্রের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশে সদা সচেষ্ট থাকতো । হযরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আগমন করে তাদের এই ধারণায় কুঠারাঘাত করেন । তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই । আরবের উপর অনারবের, অনারবের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই ।
৩. সমাজিক সম্পর্ক গঠন। মানুষ সামাজিক জীব । সমাজ ছাড়া মানুষ বসবাস করতে পারে না । ব্যক্তিও সমাজের সমন্বয়ের মধ্যে মানবকল্যাণ নিহিত । তাই আল্লাহর নবী (সা.) মানুষকে সামাজিক হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন । তিনি বলেন ‘খাটি মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে ’(সহীহ বুখারী)। ৪. অর্থ-সম্পদের ব্যবহার। নবী করিম (সা.) সমাজের অর্থ-সম্পদের সুষম ব্যবহার ও সবার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছেন । তিনি আল্লাহর প্রদত্ত যাকাত ও সাদাকাহের বিধানকে বাস্তবায়িত করে ধনীর মালে গরীবের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন । শ্রমিকের যথাযথা মূল্যায়ন সম্পর্কে তিনি ইরশাদ করেছেন, শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তাদের মজুরী পরিশোধ কর । (সুনানে বাইহাকী) ৫. মানবতাবোধ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা। প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন মানবতার আধার । তিনি কাফেরদের অত্যাচার সহ্য করে যে, মহানুভবতার প্রদর্শন করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল । এমনিভাবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন । পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে তোমরা যখন বিচার করো, তখন ন্যায়সঙ্গত ভাবে কর । ৬. শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তার। প্রকৃত পক্ষে শিক্ষাই হলো আলো, আর অজ্ঞতা হচ্ছে আঁধার । রাসূল (সা.) পৃথিবীতে অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত করেছেন । মানুষকে জ্ঞানার্জনে উৎসাহ দিয়ে বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জন ফরজ । (সহীহ বুখারী) শিক্ষার্থী, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া সাতমসজিদ মাদরাসা, মুহম্মদপুর ঢাকা ।