আনন্দবাজারের প্রতিবেদন তিস্তা নিয়ে ভারতকে চাপে রাখতে ঢাকার অস্ত্র চীন
সাইফ নাসির: আর কয়দিন পরেই ভারতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সফরের আগে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে। এই চুক্তি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ইতিবাচক থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রবল আপত্তি রয়েছে এই চুক্তিতে। তার আশঙ্কা বাংলাদেশের সাথে ভাগাভাগি করার মতো যথেষ্ট পানি তিস্তায় নেই। তাই পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের পানি বঞ্চিত করে তিনি বাংলাদেশকে পানি দিতে রাজি না। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, ভারত যেহেতু সবসময় অভিযোগ করে চীন ব্রহ্মপুত্রে ব্যারাজ তৈরি করায় নিম্ন অববাহিকায় জলের পরিমাণ কমেছে সেহেতু তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনায় চীনে সঙ্গেও কথা বলা প্রয়োজন। তবে এইচ টি ইমামের কথার প্রেক্ষিতে আনন্দবাজার লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের দশ দিন আগে তিস্তা নিয়ে চাপ বাড়াতে চীনের তাস খেলল ঢাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, তিস্তায় জলের প্রবাহ যাতে ঠিক থাকে, তার জন্য বেজিংয়ের সঙ্গেও কথা বলাটা প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্রের উচ্চ অববাহিকায় জলের প্রবাহ নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা চীনের সঙ্গে কথা বলতে পারি।’ ইমামের কথায়, ভারত প্রায়ই অভিযোগ করে, চীন ব্রহ্মপুত্রে ইচ্ছেমতো ব্যারাজ তৈরি করায় নিম্ন অববাহিকায় জলের পরিমাণ কমেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টার কথায় ‘এ নিয়ে জট ছাড়াতে তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে আলোচনায় চীনকেও সামিল করা যেতে পারে।’ বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন ইমাম। বিষয়টিকে তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে উল্লেখ করলেও তিনি জানান, বাংলাদেশ নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে।
বিষয়টি এক দিকে যেমন অভিনব, অন্য দিকে তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ। সামরিক ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে ঢাকার ক্রমঘনিষ্ঠতা নিয়ে নয়াদিল্লির অস্বস্তি লুকোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশে চীনের বিপুল লগ্নিও দিল্লির কপালে ভাঁজ ফেলেছে। প্রশ্ন উঠেছে এমন একটি সময়ে তিস্তার মতো একান্ত দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের আলোচনায় বেইজিংকে জড়ানোর প্রস্তাব কেন দেওয়া হল? এটা কি হাসিনার সফরের আগে ভারতকে চাপে ফেলার নয়া কৌশল? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আশাবাদী ঢাকা। উপদেষ্টাদের আশা, দিল্লিতে মমতা নিশ্চয়ই হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু তার মধ্যেও চীনকে টেনে তিস্তা নিয়ে চাপ রাখলেন তাঁরা।
ব্রহ্মপুত্রে চীন বাঁধ দিয়ে জল টেনে নিচ্ছে, গোড়ায় এ রকম সন্দেহ থাকলেও পরে ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে যে এই সন্দেহ অমূলক। ব্রহ্মপুত্রের জলে ‘রান অন দ্য রিভার’ প্রকল্প করছে চীন। অর্থাৎ জলস্রোতকে না-আটকে টারবাইনের মাধ্যমে ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করছে তারা। এর ফলে নিম্ন অববাহিকায় থাকা দেশগুলির জল পেতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
পদ্মা সেতু থেকে সামরিক সহযোগিতা, সর্বত্র চীনের সাহায্যের কথা ঢাকার বিশাল বিশাল সরকারি বিল বোর্ডে শোভা পাচ্ছে। তবে বেইজিং ও নয়াদিল্লির তুলনামূলক আলোচনায় (অন্তত ভারতীয় সাংবাদিকদের সামনে) বাংলাদেশের সরকারি কর্তারা ভারতকেই এগিয়ে রাখছেন। তাঁরা বুঝছেন এখনই তিস্তা চুক্তি সই করার মতো পরিস্থিতি হয়নি। তিস্তা ব্যারাজের মানোন্নয়নের বিষয়টি যে হাসিনার সফরে গুরুত্ব পাবে, তা স্পষ্ট করেছেন বাংলাদেশের নেতৃত্ব। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের প্রাথমিক সমীক্ষার ফল নিয়ে কথা হবে বলেও জানান হাসিনার অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা মশিউর রহমান। তাঁর মতে, এই প্রকল্প হলে অঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি এতটাই বাড়বে যে প্রকল্পের খরচ (৩০০ কোটি ডলার) উঠে আসবে। এই প্রকল্পের অর্ধেক খরচ বাংলাদেশ দিতে প্রস্তুত বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানাবেন হাসিনা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও জানান, ‘গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকার জলসম্পদের উন্নতির বিষয়টি আসন্ন বৈঠকে আলোচনার টেবিলে থাকবে।’ হোয়াইট হাউস নয়, ট্রাম্পের সঙ্গে মার-এ-লোগোতে বৈঠক শি জিনপিংয়ের
লিহান লিমা : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের নিশ্চয়তা দিল চীন। আসছে সপ্তাহে ফ্লোরিডার মার-এ-লোগো’তে যাবেন শি। বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দুই নেতার প্রথম বৈঠকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানায়, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ট্রাম্প-শি বৈঠকের স্থান নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছিল। চীন হোয়াইট হাউসের চাইতে মার-এ- লোগোতে বৈঠকেই স্বস্তি বোধ করবে। তাই এখানেই স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন। এর আগে ট্রাম্প অনৈতিক বাণিজ্য, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিতে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা বাহিনীর অবস্থানের জন্য দেশটির সমালোচনা করেছিলেন।
১৯ মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের চীন সফরের পরই চীন-যুক্তরাষ্ট্রের দুই নেতার আলোচনার খবর আসে। এর প্রেক্ষিতে ৬-৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সফরের তারিখ নির্ধারণ করে চীন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং জানান, ফিনল্যান্ড সফরের পর মার-এ-লোগো’র পাম বিচের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন শি।
এর আগে ৯ই ফেব্রুয়ারি দুই নেতা ফোনালাপ করেছিলেন। কথোপকথনের সময় ট্রাম্প ‘এক চীন’ নীতির জন্য চীনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসা করেন। ট্রাম্প আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক চীন নীতিতে বিশ্বাস করে এবং তাইওয়ানে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দূত প্রেরণ করবে না। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, সম্পাদনা: রফিক আহমেদ