গল্পকার ও দার্শনিকের মধ্যে কি ফাঁরাক আছে?
স্বকৃত নোমান
বহু বছর পর আন্তন চেখভের ‘শোক’ গল্পটি আবার পড়লাম আজ। আগের পাঠ আর এই পাঠের মধ্যে কত না ফাঁরাক! জীবনের নিগূঢ় দর্শনগুলো চেখভ গল্পের আঙ্গিকে বলে গেছেন বলে তাকে আমরা গল্পকার বলি। আসলে তিনি দার্শনিক। নন কি? আচ্ছা, গল্পকার ও দার্শনিকের মধ্যে কি ফাঁরাক আছে? বাহ্যচোখে হয়তো আছে, আসলে নেই।
মানুষের জীবন তো আসলে এমনইÑ কুন্দকার মিস্ত্রি গ্রিগরি পেত্রভের মতো। চেখভের গল্পের সেই পেত্রভ, যে তার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ছুটছে হাসপাতালের দিকে, অথচ হাসপাতালে পৌঁছার আগেই স্ত্রী মারা গেল। চল্লিশ বছর সে বুড়ির সঙ্গে জীবন কাটিয়েছে, অথচ তখন তার মনে হলো বুড়িকে নিয়ে সবে বাঁচতে শুরু করতে না করতেই, তাকে মনের কথা বলতে না বলতেই, দয়ামায়া দেখাতে না দেখাতেই এবং যে মুহূর্তে বুঝতে পারল সে ভালোবাসে তার স্ত্রীকে, তাকে ছাড়া সে বাঁচতে পারবে নাÑ সেই মুহূর্তে বুড়ি তাকে ছেড়ে চলে গেল এবং হারিয়ে ফেলল নিজের পা দুটিও। ডাক্তারের পক্ষেও আর কিছু করার থাকল না। প্রত্যেক মানুষের জীবন আসলে পেত্রভের মতোইÑ বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। পেত্রভের মতো প্রত্যেক মানুষেরই এমন একটা সময় আসে, যখন তাকে নিয়ে আর কিচ্ছু করার থাকে না কোনো চিকিৎসকের। কত সামান্য একটি ঘটনা, অথচ কী চমৎকারভাবেই না চেখভ তুলে আনলেন তার গল্পে। মানুষের জীবনকে খুব গভীর থেকে দেখেছেন তিনি এবং দেখিয়েছেন। মানবজীবনকে বোঝার জন্যই তো তিরিশ বছর বয়সে দশ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সাখালিন দ্বীপের কয়েদিদের অমানুষিক জীবন দেখতে গিয়েছিলেন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক