আত্মত্যাগী বীর যোদ্ধাদের অবদানের বিনিময় কি আমরা দিতে পারছি?
রবিউল আলম
মানুষ ইতিহাস হয় কিভাবে? কারা ইতিহাসে ঠাই পায়? যারা অর্থ ও প্রাচুর্য পরিহার করে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন দেশ ও মানুষের তরে। যারা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে, জনকল্যাণে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেকে বিনা স্বার্থে নিবেদন করেছেন যুগে যুগে কালে কালে ইতিহাস তারাই হয়েছেন। কারণ তারা মানুষ ও দেশের পথপ্রদর্শক।
আমাদেরও আছে গর্বের ইতিহাস। আছে ৫২, ৬৯ কিংবা ৭১। জাতির চরম দুঃসময়ে, মাতৃভাষা, মাতৃভূমিকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে এদেশের লাখো মানুষ জান দিয়েছেন। নিঃস্বার্থ প্রাণ বিলিয়েছেন দেশের তরে। তার ফলেই আমরা নিজের ভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, প্রাণ খুলে নিজের ভাষায় কথা বলতে পারছি। মুক্ত স্বাধীন দেশে প্রাণ খুলে কথা বলার এই নিশ্চয়তা তা তো তাদেরই অবদান। তারাই তো আমাদের পথ দেখিয়েছেন। এগিয়ে যাওয়ার রাস্তাটি তৈরি করে গেছেন। কিন্তু আমরা তাদের সেই অবদানের স্বীকৃতি দিতে পারছি?
যখন দেখি একজন ভাষা সৈনিক, একজন মুক্তিযোদ্ধা অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন কিংবা ইতোমধ্যেই মারা গেছেন কিছু না পেয়েই তখন মানুষ হিসেবে আবেগকে সম্পর্শ করে। ভীষণ খারাপ লাগে। কিন্তু তারা যে বীর সে প্রমাণ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দিয়ে যান। কারও কাছে মাথানত, করুণাভিক্ষা চাননি। কষ্টে জীবন অতিবাহিত করলেও নষ্ট করেননি মান। তাদের নিয়ে সত্যিই অনেক গর্ব হয়। আনন্দিত হই। উৎসাহ পাই সংগ্রামের। এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাই। প্রতিদিনই বিপদসংকুল পথের শক্তি হিসেবে তারা কাজ করেন।
গর্বিত, ইতিহাসের নায়কদের যথাযথ সম্মান দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছেন, তাদের সন্তানদের চাকরির কোটা বৃদ্ধি করেছেন, অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠিয়েছেন, বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রাগ করে নাম উঠানো থেকে বিরত রয়েছেন। অনেকেই বলছেন, নাম কতজনের উঠাবেন, বাংলার ৭ কোটি মানুষ মুক্তিযোদ্ধা। তালিকা করতে হবে রাজাকারের তালিকা করুন। কতজনকে ভাতা দিবেন, আমরা ভাতার জন্য যুদ্ধ করিনি, পারলে একটু সম্মান দিন। দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনুন।
কিছুদিন আগে সাতক্ষীরার ভাষা সৈনিক বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন। একুশে টিভির সচিত্র প্রতিবেদন দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না। যারা এলাকার জনপ্রতিনিধি তারা কি করছেন, কেন গুটিকয়েক ভাষা সৈনিকের খবর রাখেন না। কেন দেশের জন্য যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধারা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে? কেন তা সরকারের নজরে আনতে পারেন না? আমাদের সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত, অনেক অবদান রাখছেন দেশের জন্য যাদের ত্যাগ আছে। কিছু একটা করতে চান, তাহলে শুধু একজন জনপ্রতিনিধির নজরে আনবেন, সে দায়িত্ব আমরা কতটুকু পালন করছি?
রায়েরবাজারের বুদ্ধিজীবীদের লাশ আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমি জীবন্ত সাক্ষী। আমিই তাদের লাশ প্রথম দেখি। পরে বুদ্ধিজীবীদের লাশ নিজ হাতে তুলে দিয়েছিলাম তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। সেদিন কি জানতাম এই কাজের জন্য আমি ইতিহাস হব, না সমাজ আমাকে এত সম্মান দিবে? সেদিন মানবিক কারণে কাজগুলো করেছিলাম, অর্থ দিয়ে কি এই সম্মান অর্জন হবে?
একাত্তর জার্নালের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞ আমাদের অর্থনীতিসহ অগনিত সংবাদপত্রের কাছে। সম্মান পেয়ে, উৎসাহ পেয়ে এখন সমাজবিরোধী কোনো কাজ করতে পারি না। সরকারের সুনাম নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে, তা প্রতিরোধ ছাড়া থাকতে পারি না। মাদক নিয়ে অনেক লেখা লিখেছি, কাজ হয়েছে। সামনে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। আমি আশাবাদী।
ইজারাদার কন্ট্রাক্টর হলেই প্রশাসন মনে করে সরকার দলীয় লোক তদন্ত করে দেখে না, কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। শত অনিয়মত দেখে জীবনবাজি রেখে জনগণের অধিকার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সরকারের সুনাম রক্ষায় মাংস ব্যবসায়ীদের নিয়ে ধর্মঘট করতে হলো, মাংসের দাম বেড়েই চলছে, দেখার কেউ-ই নেই। ধর্মঘট করল মাংস ব্যবসায়ীরা, প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে ক্রেতা সাধারণের উপর। টোল বৃদ্ধি করে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে সুকৌশলে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় ধর্মঘট আর হয়নি।
দেশ ও জাতির জন্য কে কি করেছে, কার কি অবদানÑ সব দেখার দায়িত্ব যেন শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই! একবার শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলিম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেছিলেন, ‘নেত্রী আপনার পাশে কেউ নেই, আপনি একা। আর কত লাশ আপনি বইবেন, আর কত শোক আপনি সইবেন।’ শেখ হাসিনার চোখের পানি মুছতে দেখেছি, অঝোরে কেঁদে চলছিল নেত্রী। নেত্রী অনেক সমাবেশে বলেন, অসৎ টাকায় সন্তান ভালো হয় না, অসৎ টাকায় সংসার ভালো থাকে না। ভালোটাকেই আমাদের গ্রহণ করা উচিত।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান