কুমিল্লায় জঙ্গি নেই মৌলভীবাজারে জঙ্গি অভিযান স্থগিত
আজাদ হোসেন সুমন, ইসমাঈল হুসাইন ইমু, তারিকুল ইসলাম ও সোহেল রানা: কুমিল্লার কোটবাড়িতে গন্ধমতির জঙ্গি আস্তানার ভেতরে কোনো জঙ্গি নেই। অভিযান পরিচালনার পর জঙ্গি আস্তনায় কোনো জঙ্গি পায়নি পুলিশ। তবে ওই আস্তানায় প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক আছে বলে ধারণা করছেন তারা। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের বড়হাটে অপারেশন ম্যাক্সিমাস চলাকালেই দু’দফায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। সেখানে অনেক প্যাকেট দেখা যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র। অপারেশনটি জটিল হওয়ায় শনিবার সকাল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম প্রধান মনিরুল ইসলাম। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গন্ধমতির ওই বাড়িতে জঙ্গি আছে কি না তা এখনও আমরা নিশ্চিত না। তবে ভেতরে প্রচুর পরিমাণ প্যাকেট দেখা যাচ্ছে। সেগুলো বিস্ফোরকদ্রব্য বলে মনে হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ১১টা ১০ মিনিটে ওই আস্তানায় ‘অপারেশন স্ট্রাইকআউট’ নামের অভিযান শুরু করে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট। এরপর সেখান থেকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কুমিল্লার কোটবাড়ির গন্ধমতির জঙ্গি আস্তানা।
সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সোয়াট ও সিটিটিসির সদস্যরা। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি মোতায়েন রাখা হয়েছে, রয়েছেন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরাও। এদিকে গন্ধমতি জঙ্গি আস্তানায় আশপাশের কোটবাড়ি এলাকায় ১৪৪ ধারি জারি করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় মাইকিং করে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে নিষেধ করা হয়। জানা যায়, ছাত্র পরিচয়ে তিনতলা বাড়ির নিচতলার বাসাটি একমাস আগে ভাড়া নেওয়া হয়। ভবনটির মালিক দেলোয়ার হোসেন, পেশায় একজন পিকআপভ্যান চালক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যদের হাতে আটক এক জঙ্গির দেওয়া তথ্য থেকে গন্ধমতি গ্রামের ওই বাড়িটির সন্ধান পায় পুলিশ। গত বুধবার বিকেল থেকে ওই বাড়িটি ঘিরে অভিযানে নামে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি সেখানে র্যাবও অবস্থান নেয়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি দলও যায় ঢাকা থেকে।
ভবনের মালিক দেলোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, তার বাসার নিচতলায় চারটি ইউনিটি। একটিতে তারা থাকেন। যে ফ্ল্যাটটি ঘিরে সন্দেহ সেখানকার এক রুমে দুইজন ছাত্র থাকে। বাকি রুমে আরও দুই জন থাকে। তারা গেঞ্জির ব্যবসা করে। তাদের বাড়ি নোয়াখালী।
পুলিশ জানায়, ভবনটি থেকে কয়েকজন সাধারণ ছাত্রকে নিরাপদে বের করে আনা হয়েছে।
বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় সোয়াটের অভিযান-মৌলভীবাজারের বড়হাট এলাকার জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ চলছে। শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টায় এখানে আবার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় বাড়িটির ছাদে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। সঙ্গে গুলি চলছে থেমে থেমে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সোয়াট টিমের সদস্যরা ড্রোন ব্যবহার করে দেখেছেন, ডুপ্লেক্স বাড়ির আদলে সাজানো বাড়িটির ভেতরে প্রচুর বিস্ফোরক ছড়ানো-ছিটানো রয়েছে।
এর আগে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে জঙ্গিদের ছোড়া সবশেষ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল জঙ্গি আস্তানায়। ওই বিস্ফোরনে স্প্রিন্টারের আঘাতে কয়সর নামে একজন পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়। মাঝে প্রায় চার ঘণ্টা নিরব ছিল এই এলাকা। সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে বড়হাটের এই বাড়িতে ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ শুরু হয়। এরপর দিনভর থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণ হয়। ওই ভবনের ভেতরে ৪/৫ টি কক্ষে জঙ্গি রয়েছে। এরমধ্যে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগান ফেরত জঙ্গি রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টরা ধারনা করছেণ। তারা বলেছেন, আফগান ফেরত জঙ্গি বোমা তৈরিতে দক্ষ বলেও তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। সন্ধ্যায় প্রেসব্রিফিংয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় আগামী সকাল পর্যন্ত অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। অভিযান আগামীকাল সকালে শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, আপনারা এখান থেকে শুনেছেন যে, জঙ্গিরা ভেতর থেকে কিছু বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আমাদের সোয়াট দলটি যখনই ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছে, তখনই জঙ্গিরা ভেতর থেকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আমরা ধারণা করছি প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে তাদের কাছে। অপারেশনটি অপেক্ষাকৃত একটু জটিল। যে বাড়িটিতে তারা অবস্থান নিয়েছে, সেই বাড়িতে অনেক কক্ষ রয়েছে এবং একটি নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। এ কারণে এই অভিযান শেষ হতে আরও কিছু সময় লাগবে। বাড়িটি এখনও ঘিরে রাখা হয়েছে। সম্পাদনা: এনামুল হক