লেখক কেন লিখেন?
স্বকৃত নোমান
লেখক কেন লিখেন? ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো কেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে বসে থাকেন? মানুষের বাহবা কুড়ানোর জন্য? রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য? পুরস্কার-সম্মাননায় আলমিরার তাকগুলো ভরিয়ে তোলার জন্য? কোনো এক মনের মানুষ পড়বে বলে? না মনে হয়। এসবের একটির জন্যও তিনি লেখেন না। লেখার সময় কোনো প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিই তার মাথায় থাকে না।
প্রত্যেক লেখকই লেখার মধ্য দিয়ে জীবনের কোন এক গূঢ় প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ান। এক নামহীন অনুপ্রেরণা শাপগ্রস্ত ইদিপাসের মতো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সেই তাড়না থেকেই তিনি লেখেন। কিন্তু এই তাড়না তাকে কে দিয়েছে? কে অলক্ষ্যে বসে তাকে শাসন করে? তাড়িয়ে বেড়ায়? কোথা থেকে আসে এই অনুপ্রেরণা? লেখক হয়তো জীবনভর এই অনুপ্রেরণার উৎসেরই সন্ধান করে বেড়ান।
লেখক মহাসমুদ্রের সেই শামুক, যার খোলসের উপর দিয়ে চলে যায় লক্ষ-কোটি ঢেউ। উত্তাল ঢেউ তাকে দিগদিগন্তে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই খোলস থেকে তিনি বের হন না। হামেশা তিনি গুটিয়ে রাখেন নিজেকে। কেউ তার ভেতরটাকে দেখতে পায় না। কেউ তার ভেতরের যজ্ঞকু-টাকে দেখতে পায় না। নির্জনে তিনি ওই খোলস থেকে বেরিয়ে নিজেকে মেলে ধরেন। ওই খোলস যদি একবার ভেঙে যায় তার পক্ষে লেখালেখিটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক