ডায়াবেটিস ও পুরুষত্বে সমস্যা : সমাধান কী
ডা. জাকির হোসেন
মি. আবীর (ছদ্মনাম) বয়স আনুমানিক পয়তাল্লিশের কোটায়। একদিন ফেসবুকে আমাকে ম্যাসেজ পাঠালেন। বললেন, উনি আমার সঙ্গে চেম্বারে দেখা করতে চান। আমি তাকে বললাম আপনি হাসপাতালে আসেন। উনি বললেন, আমি প্রাইভেটে আপনাকে দেখাতে চাই। আমার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কথা আপনার সঙ্গে একান্তভাবে শেয়ার করতে চাই। আমি বললাম, আপনি হাসপাতালে আসেন আমি আপনাকে আলাদা করে সময় দেব। উনি আমার কাছ থেকে অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে আমার কাছে আসলেন। আমি অফিস আওয়ারের পর তাকে আসতে বলেছিলাম। উনি ঠিক অফিস সময়ের পরপরই আমার কাছে এসে হাজির হলেন। উনি কিছুটা জড়তা নিয়ে বলতে শুরু করলেন। বললেন, তার দাম্পত্য জীবনে এখন খুব সমস্যা হচ্ছে। তার এই সমস্যার জন্য স্ত্রী এখন রাত জেগে ফেসবুকে সময় ব্যয় করে। সংসারে তার যুবতী দুই কন্যা আছে। কিন্তু তার এই সমস্যার জন্য স্ত্রী সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে অন্য দিকে মনোনিবেশ করছে। কোনকিছু ঘটে গেলে মেয়েরা সামাজিকভাবে হেয় হবে। মেয়েদের বিয়েতে সমস্যা হবে।
স্বামী হয়ে চোখের সামনে তাকে সব সহ্য করতে হচ্ছে। ভদ্রলোক একজন ব্যবসায়ী মানুষ। নরসিংদীতে তার একটি কারখানা আছে। জিজ্ঞেস করলাম আপনার কী ডায়াবেটিস আছে? উনি বললেন, হ্যাঁ আছে। আমি বললাম, কতদিন হলো আপনার ডায়াবেটিসের সমস্যা ধরা পড়েছে। উনি বললেন, পাঁচ বছর হলো এটা ধরা পড়েছে। ঠিকমতো কি এর চিকিৎসা নিচ্ছেন? উনি বললেন, ব্যবসার কাজে খুব বেশি ব্যস্ত থাকেন। তাই ঠিকমতো চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না। আর চিকিৎসক প্রতি মাসেই একবার করে দেখাতে বলেন এটা ভদ্রলোকের পছন্দ হয় না। আমি বললাম, চিকিৎসক আপনাকে আপনার সব সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। উনি বললেন, উনি এই গোপন সমস্যার কথা চিকিৎসকের সঙ্গে শেয়ার করেননি। আমি তার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম। তার সব কাগজপত্র খুটে খুটে দেখলাম। দেখলাম ভদ্রলোক ঠিকমতো কখনোই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করাননি। তার ডায়াবেটিস কখনই নিয়ন্ত্রণে ছিল না। যতগুলো ব্লাড সুগার পরীক্ষার কাগজ পেলাম সেখানে সর্বনিম্ন সুগার ছিল পনের। আমি সব চেক করে তাকে বললাম, আপনার এই সমস্যাটার জন্য আপনার ডায়াবেটিস রোগটি দায়ী। উনি চমকে উঠলেন। উনি আমাকে বলে উঠলেন, আগের চিকিৎসক তাকে তো খুলে বলেননি যে ডায়াবেটিস থেকে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম।
ডায়াবেটিস এমন এক রোগ যেটি শুধু চিকিৎসা দিলেই রোগীর চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয় না। ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসার অন্যতম দিক হলোÑ রোগীকে অনেক কিছুই সময় নিয়ে শিখিয়ে দিতে হয়। রোগীরও ঠিকমতো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হয়। চিকিৎসকের কাছে সময় নিয়ে আসতে হয়। উনি আমায় বললেন, ব্যস্ততার কারণে উনি সময়মতো খাওয়ার সময় পান না। আমি বললাম, আজকে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটা থেকে তো আপনার উপার্জিত টাকাপয়সা দিয়েও সমাধান করতে পারছেন না। আপনারা সংসার আজ ভাঙতে চলছে। উনি মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইলেন। উনাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে আমার সেল নাম্বার দিয়ে বিদায় জানালাম। বর্তমানে বেশিরভাগ পুরুষের মধ্যে এই সমস্যা বেশ প্রকট হয়ে উঠছে। দিন যত যাচ্ছে নিত্যনতুন আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের কায়িক শ্রমের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বাড়ছে মানুষের ফাস্ট ফুড গ্রহণের প্রবণতা। সেই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত জীবন অভ্যাসের কারণে মানুষের মাঝে বাড়ছে ডায়াবেটিসের হার। এই ডায়াবেটিস এখন পুরুষের পুরুষত্ব হারানোর অন্যতম কারণ। দিনে দিনে এই পুরুষের এই ব্যাধির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ডায়াবেটিসের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের যৌন ইচ্ছা যাচ্ছে ক্রমশ কমে যাচ্ছে। কাজেই আপনার ডায়াবেটিস নিয়ে হেলা করবেন না। সব সময় আপনার শরীর ও আপনার পরিবারের কথা চিন্তা করে এর চিকিৎসা নিতে কার্পণ্য করবেন না।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান