অনুমান করতে পারছি কী-কতটা উদ্বেগে আছে এসব পরিবার!
ফিরোজ আহমেদ
র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান আবুল কালাম আজাদ মৃত্যুবরণ করেছেন। দায়িত্ব পালন করার সময় মৃত্যু গৌরবের। তিনি আরও অনেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে নিজের জীবন দান করেছেন। তার পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাই। আজই আরও একটা মৃত্যুর সংবাদ পত্রিকায় আসলো। ছাত্রদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা, কর্ণফুলী নদীর তীরে তার লাশ মিলেছে। হাত-পা-মুখ বাঁধা। নুরুল আলম ওরফে নুরুর পরিবার জানিয়েছেন তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে। পুলিশ এই ঘটনা অস্বীকার করলেও বলেছে নুরু নানান মামলায় আসামি ছিলেন। অন্যদিকে বিএনপি দাবি করেছে নুরু গুম হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া একটা সংগঠনে যুক্ত ছিলেন। হতেই পারে, পুলিশের অভিযোগগুলো সত্যি। হতেই পারে বিএনপির দাবিও। কিন্তু কেউ দায় নেয়নি, মহৎ কোনো কর্তব্যসাধনের সময় মৃত্যু হয়নি, বিনা বিচারে এমন অজস্র হত্যাকা-ে নিহত মানুষগুলোর পরিবারেরর প্রতিও আমরা গভীর সমবেদনা জানাই। আজ ১০ দিনে ১২ জনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ এসেছে। এই অভিযোগগুলোও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেই। অভিযুক্তরা স্বীকার করেনি। কিন্তু ব্যবহার করা হয়েছে এমনকি পরিচয়হীন মাইক্রোবাসও। একটি ঘটনায় ভাই মোটরসাইকেলে করে মাইক্রোবাসকে অনুসরণ করতে গেলে তাকেও তুলে নিয়ে যায়। আনুমান করতে পারছি কী, কতটা আতঙ্ক আর উদ্বেগে আছে এই সব পরিবার!
আমরা নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে বলেই হয়তো এই সব কথা লিখতে পারছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত না, মানুষ যা ভাবছে তা বলতে পারছে কি না। মানুষ যা ভাবছে তা লিখতে পারছে কি না। হয়তো, হতেই পারে, কেউ কেউ যেমন বলছেন, মানুষের কি ভাবা উচিত, কি বলা উচিত, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দিলেই সবার জন্য তা মঙ্গলজনক হবে। কিন্তু, এই বলতে না পারা, ভাবতে না পারা তরুণরা কেউ কেউ যদি উগ্রপন্থি হয়ে যায়, অসহায় ক্রোধ যদি ভিন্ন সড়ক নেয়, সেটা কি আরও অনেক মৃত্যু আর শোকের কারণ ঘটাবে না? ক্রোধ আর ঘৃণার একটা চক্রাবর্তে আমরা যেন ডুবে যাচ্ছি। দেশে কোনো রাজনীতি হচ্ছে না, মানুষ তার পেশার দাবি তুলতে ভয় পাচ্ছে। পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়াবার দাবিকে কী নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে মাত্র কদিন আগে, আমরা তো দেখলাম।
সবচেয়ে ভয়াবহ হবে, সবার জন্যই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আরও সন্দেহ আর ক্রোধ বিষ্ফোরিত হয়। কেননা, কোনো রাজনীতিকে যখন বিকশিত হতে দেওয়া হয় না, এধরনের পরিস্থিতির সুযোগ সবচেয়ে বেশি নিতে পারবে সরকারেরই মদদে মাঠে এগিয়ে থাকা মৌলবাদী আর সাম্প্রদায়িক শক্তি। বাংলাদেশে রাজনীতিকে মুক্ত করাটা তাই সবচেয়ে জরুরি কাজ। ক্ষমতাসীন বলেই, আওয়ামী লীগের ওপরই দায়িত্বটা সবচেয়ে বেশি বর্তায়।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন