সংখ্যালঘু ভোটের উপরও এখন বিএনপির দখল আছে
কাজী সিরাজ
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের যেভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, সেভাবেই তারা তা পালন করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে না ইসি সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ইসি তার ভূমিকা যেটুকু পালন করা দরকার যথার্থভাবে করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।
নির্বাচনে টুকটাক কিছু ঘটনা ঘটেই থাকে। পৃথিবীর সব জায়গায়ই এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা হয়। তবে আমি মনে করি, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আমার ধারণা, নির্বাচনের ফল এ রকমই হওয়ার কথা ছিল। সাক্কুরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বেশি।
কর্নেল আকবর হোসেনের হাত ধরেই সাক্কু রাজনীতিতে এসেছেন। আকবর হোসেনের দারুণ প্রভাব আছে কুমিল্লায়। সেটা তার কাজে লেগেছে। তা ছাড়া সাক্কু ব্যক্তি হিসেবে সৎ থেকে অতীতে মেয়র ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন। নিজের অর্থ দিয়েও অনেক কাজ করেছেন তিনি। কুমিল্লা সিটি বিউটিফিকেশন করতে সরকার তাকে কোনো টাকা দেয়নি। নিজেই এই টাকা অর্গানাইজড করেছেন। এটা জনগণ জানে।
৫৫ হাজার সংখ্যালঘু, ৩৮ হাজার নতুন ভোটারÑ এই ভোটাররা গেল কোথায়? তার অর্থ হচ্ছেÑ সংখ্যালঘু ভোটের উপরও এখন বিএনপির দখল আছে। সংখ্যালঘুরা এখন সব শুধু নৌকা দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে না। তাদের ভোট সাক্কুও পেয়েছেন। নতুন ভোটারদের ভোটও সাক্কু পেয়েছেন। তরুণদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছেÑ কুমিল্লার উন্নয়নে তার প্রতিশ্রুতিকে জনগণ মূল্য দিয়েছে। আওয়মী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ হচ্ছে, সীমা মাইনাস দিয়েই শুরু করেছেন। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগে যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত সেটার প্রভাব পড়েছে। কুমিল্লার রাজনীতিতে আফজাল খানের একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি আছে। গত নির্বাচনে তিনি সাক্কুর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন এবং অনেক ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন।
তারপরেও তুলনামূলকভাবে নারায়ণগঞ্জে যেমন আইভির সঙ্গে বিএনপি প্রার্থী যত সৎ হোক, যত আদর্শবাদী হোক কিন্তু আইভী ছিল আইকন। ওইখানে তার কর্ম, তার ব্যাকগ্রাউন্ড সবকিছু মিলিয়ে। সাক্কু হচ্ছেন কুমিল্লার জন্য আইকন। তার ব্যাকগ্রাউন্ড, তার চরিত্র, তার কাজকর্ম, তার পারিবারিক কাজ সবকিছু মিলিয়ে এখানে সাক্কুর একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল, যা সীমার ছিল না। ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে কিছুদিন দায়িত্বে ছিলেন সীমা। এই অল্প সময়ে তিনি এমন কিছু করতে পারেননি বা করার সুযোগ পাননি যার কারণে মানুষ তাকে বিবেচনা করতে পারে। কুমিল্লায় মূলত ভোট হয়েছে নৌকা আর ধানের শীষে। প্রমাণ হয়েছে কুমিল্লায় ধানের শীষের প্রভাব বেশি। একই সঙ্গে প্রার্থীর গুণাবলি রয়েছেই। সব মিলিয়েই বিএনপির প্রার্থী সাক্কুর এই জয়।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান