ডুবছে হাওর, কাঁদছে কৃষক
নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি প্রতিমূহুর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টানা ৪দিনের বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ও পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে প্রতিমূহুর্তে ডুবছে হাওর। ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নমানের বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫০হাজার হেক্টর ফসলি জমি ডুবে গেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
জেলার ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া ৫৮কোটি টাকা ৭০লাখ টাকা সম্পূর্ন জলে যাওয়ার পথে। অনেক স্থানে কোন কাজই করেনি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) বা ঠিকাদার।
ঝুঁকিপূর্নভাবে রয়েছে বেশ কয়েকটি হাওর। কৃষকরা বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে মেরামতে কৃষকরা প্রানপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গত মৌসুমের ন্যায় ফের অকাল বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ায় জীবন-জীবিকার করুণ পরিণতিতে সর্বস্ব হারাতে বসা জেলার কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। ছাতকে জলাবদ্ধতায় ও নদীর পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে বোরো জমি। উপজেলা জল্লার হাওর, বড় হাওর, জৈন্নার হাওর, চেলারচর, নাইন্দার হাওরসহ বেশ কয়েকটি হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জে পাখিমারা হাওর, সংহাই হাওর, নাগডরা, দক্ষিণ হাওর, বড় হাওর, তেছার কোনা, নলুয়ার হাওরের কিছু অংশ, হাসনাবাজ হাওর, সদর উপজেলার দেখার হাওর, কাঙলার হাওর, খরচার হাওর, জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওর, জামালগঞ্জ উপজেলার পাঁকনার হাওর, হালির হাওর, ছনোয়ার হাওর, ডাকুমার হাওর, ঘুড়ি হাওরসহ কয়েকটি হাওরের ফসল জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে। নদীর পানি বেড়ে বাঁধ উপচে ও বাঁধ ভেঙে দিরাই উপজেলার বরামহাওর পাড়ের কাদিরপুর ও ধলের মাঝামাঝি তুফানখালি বাঁধের একটি অংশ ভেঙে যায়। ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনারথাল, ডুবাইল, মধ্যনগর থানার মধ্যনগর মেঘনা, মরিচাউরি, শালদিঘা, চামরদানী ইউনিয়নের গুরমা, কাইলানী, আরিবন, বুড়া ছুপরি হাওরসহ বেশ কয়েকটি হাওরের বাঁধ ভেঙে বোর ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। হুমকির সম্মুখিন বাঁধগুলোতে স্থানীয় লোকজন দিন-রাত বাঁশ ও বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ে মাইকিং করে কৃষকদের বাঁধে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।চলতি বছরে সুনামগঞ্জে বোরো ফসলের আবাদ হয়েছে ২লাখ ২০হাজার ৮৫০হেক্টর জমিতে। ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৮কোটি টাকা ৭০লাখ টাকা। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের বৃহৎ ৩৭টি হাওরসহ মোট ৪২টি হাওরে ১০কোটি ৭৭লাখ ব্যয়ে ২২৫টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ও ৪৮কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করছে। পিআইসির কাজ ২৮ফেব্রুয়ারি ও ঠিকাদারের কাজ ৩১মার্চের মধ্যে শেষ হবার কথা থাকলেও অনেক পিআইসির কাজ শেষ হয়নি ও অনেক ঠিকাদার সবেমাত্র কাজ শুরু করেছে।
দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ গত শুক্রবার সকালে বাঁধ পরিদর্শনে গেলে তাকে ধাওয়া করে উত্তেজিত কৃষকরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে রক্ষা করে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সময়মত না করায় চৈত্রমাসেই বোরো ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের ছয় মাসের কষ্ট কয়েক ঘণ্টায় পানিতে তলিয়ে গেছে।ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, পাউবোর ঠিকাদার বাঁধ নির্মাণ না করায় ডুবাইল হাওরের ধান তলিয়ে গেছে।সম্পাদনা : মুরাদ হাসান