মৌলভীবাজারের ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ শেষ, ৩ জঙ্গি নিহত
মাসুদ আলম ও সোহেল রানা (মৌলভীবাজার): মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাক্টিস (সোয়াট) টিমের ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ শেষ হয়েছে। আস্তানার ভিতরে তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। নিহত পুরুষদের মধ্যে একজন সিলেটের আতিয়া মহলে অভিযান চলাকালে আস্তানার বাইরে যে হামলা হয় তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জঙ্গি দম্পতি বাথরুমে আত্মহত্যা করেছে। আরেকজন আত্মহত্যা করেছে বাথরুমের পাশেই। জঙ্গিরা গুরুত্বপূর্ণ নথি ও নগদ টাকা পয়সা পুড়িয়ে ফেলে।
গতকাল দুপুরে অভিযান শেষে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, বড়হাটের অভিযান বেশ জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ তাদের কাছে তথ্য ছিল, সিলেটের জঙ্গি আস্তানার কাছের হামলাকারীরা এখানে রয়েছেন। তারা টেকনোলজি পরীক্ষা করে দেখেছেন, বড়হাটের আস্তানা থেকে সিলেটে গিয়ে হামলার পর হামলাকারীরা আবার এখানকার আস্তানায় ফিরে এসেছিলেন। সিলেটে আতিয়া মহলে র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাতজন নিহত হন। আমাদের ইচ্ছে ছিল নিহত জঙ্গিদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর।
তিনি বলেন, জঙ্গিদের বারবার তারা আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তারা এতে সাড়া দেয়নি। যখনই সোয়াট ঘটনাস্থলের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছে তখনই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। শুক্রবার দিনভর বাড়িটি ঘিরে অভিযান চলে। সন্ধ্যায় স্বল্প আলোর কারণে অভিযান স্থগিত করা হলে সোয়াটের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে আরও দুটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই শক্তিশালী বিস্ফোরণে ভবনে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। তাদের ধারণা ছিল, ভবনে আগুন ধরে গেছে। শনিবার ভবনে ঢোকার পর তারা নিশ্চিত হয়েছেন, অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। তাদের কোমর ও দেহ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে। শরীর ঝলসে গেছে। সফলভাবে অভিযান শেষ হয়। প্রচুর বিস্ফোরক ছিল। নিহতদের লাশ ময়নাতন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মনিরুল আরও বলেন, মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে জঙ্গি নির্মূলের সময় শিশুরা নিহত হয়নি। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, শিশুদের মাঝখানে রেখে তিন পাশে তিনজন সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে চার শিশুর মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার রাত সোয়া আটটার দিকে গুলির শব্দের পর সকাল পর্যন্ত আর কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। অভিযান স্থগিত ঘোষণার সময় ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মৌলভীবাজার পৌরসভার ভিতরে বড়হাট এলাকার আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসার গলিতে দোতলা এই বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা বলে সন্দেহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সেটি শনাক্ত করে ঘিরে রাখা হয়। বুধবার ওই আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। ৫৩ ঘণ্টা ঘিরে রাখার পর গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় সোয়াটের ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’। শনিবারে শেষ হয়। অভিযানে পুলিশের কনস্টেবল কায়সর আহত হন। সম্পাদনা: এনামুল হক