আইন লঙ্ঘনে ৬ মাসের সশ্রম কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ১ বছরে একই অপরাধে দ্বিগুণ শাস্তি সচিব কমিটিতে ‘কৃষি বিপনন আইন’
আনিসুর রহমান তপন: কারাদ-, জরিমানা অথবা উভয়দ-ের বিধান রেখে ‘কৃষি বিপনন আইন, ২০১৭‘ তৈরি করেছে সরকার। প্রস্তাবিত আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। যা আজ অনুষ্ঠিতব্য সচিব কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
আইনের সপ্তম অধ্যায়ে ২২ ধারায় অপরাধ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, কৃষি ব্যবসায়ী লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা, ব্যবসায়িক উদ্দেশে লাইসেন্স ছাড়া গুদাম/ হিমাগার/ওয়ারহাউসের মালিক পণ্য গুদামজাত করলে বা আমানতকারীর নিকট থেকে সরকার নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে, ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে একাধিক লাইসেন্স গ্রহণ না করলে, ব্যবসায়ীর নিজ নামে নেওয়া লাইসেন্স অন্য কেউ ব্যবহার করলে বা হস্তান্তর করলে, নির্ধারিত পণ্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত মার্কেট চার্জ গ্রহণ বা প্রদান করলে, কৃষি উপকরণ পাইকারি বা খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রকাশ্য স্থানে বা পণ্যের মোড়কে বা দৃষ্টিগোচর হয় এমনভাবে প্রদর্শন না করলে, প্রক্রিয়াজাতকারী কৃষিপণ্যের মোড়কে পুষ্টিমান ও উপাদানের শতকরা হার, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখসহ সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ না করলে বা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের পর তা বিক্রি করলে, প্রক্রিয়াজাতকারী কৃষিপণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ বা নষ্ট হওয়ার পর তা ধ্বংস না করে বিক্রির উদ্দেশে সংরক্ষণ করলে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অপরিপক্ক ফল পাকানো, পচন বিলম্বিত করণ এবং দুধ, মাছ, মাংস, ফল, শাক-সবজিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য সংরক্ষণ বা অন্য কোনো উদ্দেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক বা অন্য কোনো দ্রব্য ব্যবহার করলে, কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, কৃষি উপকরণ বিক্রয়কালে মোড়ক/প্যাকেট ব্যতীত পণ্যের সঠিক ওজন প্রদান না করলে এবং পণ্যের ওজনের সঙ্গে মোড়ক/প্যাকেটের ওজন সমন্বয় করে ওজনে কম প্রদান করলে, কোনো ব্যক্তি বা কোনো ব্যবসায়ী কৃষি উপকরণ ও কৃষিপণ্যের নীরবচ্ছিন্ন সরবরাহে বাধা সৃষ্টি অথবা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি বা বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবসায়ী/সরবরাহকারী কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ নিজ গুদাম বা ওয়ারহাউস হইতে খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তার নিকট বিক্রয় করতে অস্বীকার করলে, কৃষিপণ্য বা উপকরণ সরবরাহ সংকটের পরিস্থিতি সৃষ্টি হইলে যেকোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী তাহার মজুদ করা সম্পূর্ণ বা আংশিক কৃষিপণ্য বা উপকরণ দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরবরাহ এবং চাহিদা অনুযায়ী বিক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত না করলে কৃষিপণ্য, কৃষি উপকরণ, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদক, সরবরাহকারী, ডিলার, ব্যবসায়ী তাহাদের ক্রয় করা পণ্যের মূল্য রশিদ দোকানে সংরক্ষণ না করলে বা ক্রয় করা পণ্যের উপর এই আইনের আওতায় প্রণীত বিধিমালা দ্বারা সরকার নির্ধারিত হারের অধিক মুনাফা করলে বা সংকট সৃষ্টি অথবা পরস্পরের যোগসাজশে সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করলে, কোনো ব্যবসায়ী/ প্রক্রিয়াজাতকারি/উৎপাদনকারী পণ্য প্যাকেটজাতকরণের সময় খাদ্য দ্রব্যের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম/ ২৫০ গ্রাম/ ৫০০ গ্রাম/ ১ কেজি/ ২ কেজি/ ৫ কেজি/ ১০ কেজি/ ৫০ কেজি পর্যন্ত এবং তরল দ্রব্যের ক্ষেত্রে ১০০ মিলি/ ২৫০ মিলি/ ৫০০ মিলি/ ১ লি./ ২ লি./ ৫ লি./ ১০ লি. পর্যন্ত আয়তনের বাইরে প্যাকেট বা কনটেইনার তৈরি করলে আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
২২ ধরা ধারা লংঘনের অপরাধে একই অধ্যায়ের ২৩ ধারায় দ-ের বিষয়ে বলা হয়েছে, দোষীকে প্রথমবার অপরাধের জন্য ৬ মাসের সশ্রম অথবা বিনাশ্রম কারাদ- বা অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবে।
তবে একই অপরাধী এক বছরের মধ্যে একই অপরাধে দ-িত হলে উক্ত অপরাধের জন্য দ্বিগুন দ- আরোপযোগ্য হবে।
অষ্টম অধ্যায়ে ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে অপরাধ সংগঠনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে আদালতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। এর উপ-ধারা ২ ও ৩ এ বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহাই থাকুক, এই আইনের অধীনে অপরাধসমূহ ১ম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষেত্র মতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা বিচারকার্য পরিচালিত হবে এবং এ অপরাধ জামিন যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
২৫ ধারায় দ- আরোপের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্র্রেট দোষী ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য এই আইন অনুমোদিত যেকোনো দ- আরোপ করতে পারবেন।
মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার প্রসঙ্গে আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অন্য কোনো বিধানে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সালের ৫৯ নং আইন) এর তফসিলভুক্ত করে বিচার করা যাবে। আপিল প্রসঙ্গে ২৭ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন আরোপিত দ- দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি/ সংগঠন/ প্রতিষ্ঠান যথাযথ আদালতে আপিল করতে পারবেন। সম্পাদনা: শিমুল মাহমুদ