আওয়ামী লীগের ১৪ বছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা ২৮ বছরে ৬৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকার এনজিও সহায়তা
তরিকুল ইসলাম সুমন: দেশের উন্নয়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে ২৮ বছরে (জুন ৯০ থেকে ২০১৬-২০১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) বাংলাদেশে সহায়তা এসেছে ৬৫ হাজার ৪২৮ কোটি ৮১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৮ টাকা। এনজিও ব্যুরো সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় (আংশিক) (৯৬-৯৭ থেকে ২০০০-২০০১, ২০০৮-২০০৯ থেকে ২০১৬-২০১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ১৪ বছরে দেশে অনুদান এসেছে ৪৩ হাজার ৭২০ কোটি ১৪ রাখ ৪৪ হাজার ৪৩ টাকা। অপরদিকে বিএনপির ২ বারের শাসনামলে এসেছিল ১২ হাজার ৩৬৩ কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার ৬০৬ টাকা। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শাসনামলে (২০০৮-২০০৯ থেকে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) নয় বছরে বাংলাদেশে এসেছে ৩৮ হাজার ৯০কোটি ৬৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৬ টাকার বৈদেশিক সাহায্য।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এরশাদ সরকারের পতনের মুহূর্তে ১৯৯০ সালের জুন পর্যন্ত এনজিও সেক্টরে বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ কোটি টাকা। যা ৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে এসেছিল। তখনকার সময়ে দেশে নিবন্ধিত এনজিওর সংখ্যা ছিল ৩৪৭টি । বিএনপির শামনামলে (৯০-৯১ থেকে ৯৫-৯৬ অর্থ বছরে) এনজিও সেক্টরে এসেছিল ৪ হাজার ২৫৫ কোটি ৫ লাখ ৬৩ হজার ৯১৫ টাকা। বিপরীতে অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা (প্রায়)। আওয়ামী লীগের প্রথম (৯৬-৯৭ থেকে ২০০০-২০০১ অর্থ বছরে) দেশে এনজিও সেক্টরে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ৫ হাজার ৬২৯ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার ২৭৭ টাকা। প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় ৪১৪০টি। তবে উল্লেখ্য যে, ১৯৯৮ সালের বন্যার সময়ে এনজিওগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক বা এনজিও ব্যুরোর মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি সাহায্য নিয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে বিএনপি শাসনামলে (২০০১-২০০২ থেকে ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে) অর্থাৎ ৫ বছরে এনজিও খাতে বৈদেশিক সহায়তা এসেছিল ৮ হাজার ১০৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যা বিএনপির প্রথম শামনামলের চেয়ে ৩ হাজার ৮৮৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি। মোট ৪৫৫২টি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব সহায়তা এসেছে।বিএনপি সরকারের শেষে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (২০০৬-২০০৭ থেকে ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে) সময়ে দেশে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে বাংলাদেশের উপর। ফলে সিডর দুর্গতদের সহায়তায় ২ বছরে প্রায় ৫ হাজার ৯২০ কোটি ৮ লাখ ৭৪ হাজার ২৪৪ টাকার সহায়তা আসে এনজিও সেক্টরে। ২৩৭০টি প্রকল্পের মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শাসনামল (২০০৮-২০০৯ থেকে ২০১৬-২০১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) নয় বছরে বাংলাদেশে এসেছে ৩৮ হাজার ৯০কোটি ৬৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৬ টাকার বৈদেশিক সাহায্য।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে সহায়তা এসেছে ৩ হাজার ৪০৩ কোটি ৩৯ লাখ ৭৪ হাজার ৪০৬ টাকা। যা ১১৪২টি প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছিল। ২০০৯-২০১০ এ সময়ে এসেছে ৩ হাজার ৬১২ কোটি ২৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫০ টাকা। যা ১১৭২টি প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছিল। ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের এ সময়ে এসেছে ৪ হাজার ৬১২ কোটি ৫৬ লাখ ৩১ হাজার ১১ টাকা। যা ১১২০টি প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছিল। ২০১১-২০১২ অর্থ বছরের এ সময়ে এসেছে ৪হাজার ৩৪৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৮ টাকা। যা ১০৭৭টি প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছিল। ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরের এ সময়ে এসেছে ৫হাজার ৫৩৬ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫ টাকা। যা ১০৪৮টি প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছিল। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরের এ সময়ে এসেছে ৫ হাজার ৭৭৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৫ টাকা। যা ১১১৬টি প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছিল।
২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের এ সময়ে এসেছে ৪হাজার ৯৩২ কোটি ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৯ টাকা। যা ১০৩৫টি প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছিল। ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের এ সময়ে এসেছে ২ হাজার ৫২৫ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯৮৯ টাকা। যা ৯৮৬টি প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছিল। ২০১৬-২০১৭ (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) অর্থ বছরের এ সময়ে এসেছে ৪ হাজার ১৯৪ কোটি ৫৬ লাখ ২ হাজার ২৫ টাকা। যা ৬৭৮টি প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছে।
এনজিও ব্যুরোর উপ-পরিচালক মো. শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, এনজিও সেক্টরে সরকার আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর হয়েছে। ফলে এ সেক্টরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে ফলে দাতাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রতিফলন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় বিদেশিদের অনুদান।
উল্লেখ্য, প্রতিবেদনটি তৈরিতে অর্থ বছর গণনা করা হয়েছে। সম্পাদনা: রফিক আহমেদ