প্রশ্নপত্র ফাঁস আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় ঝাঁকুনি দিচ্ছে
ড. বদরুল হাসান কচি
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে এবার এ পরীক্ষায় ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এসব পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আতঙ্ক। কারণ বিগত পরীক্ষাগুলোতে বারবার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা থেকে এটাই সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য যে, দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী একটি শক্তিশালী চক্র দাঁড়িয়ে গেছে। ফলে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা থেকে শুরু করে মেডিকেল, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাÑ সর্বত্রই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। এই চক্র আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফাঁস করা প্রশ্ন থেকে দ্রুত ফায়দা হাসিলের ব্যবস্থাও করে নিচ্ছে। জানা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এই চক্র একেকটি পরীক্ষা থেকে কোটি কোটি টাকা পর্যন্ত কামিয়ে নেয়।
এ নিয়ে গতমাসে দুদকের এক মানববন্ধন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর কণ্ঠেও ছিল হতাশার সুর। গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘আমরা এমন একটি পরিবেশের মধ্যে আছি যা আমরা সব খুলে বলতেও পারি না, সহ্যও করতে পারি না। কিন্তু আমরা আর সহ্য করব না। সত্যিকারার্থে আমাদের মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষক বেশি দরকার।’ এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা বিভাগের সর্বোচ্চ অভিভাবক যখন মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষক খুঁজেন তখন বুঝতে বাকি নেই, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কিছু শিক্ষকের নগ্ন অংশীদারিত্ব আছে। তাছাড়া বিজি প্রেসের কিছু কর্মকর্তা তো এ অভিযোগে জেলেই আছে তা সকলের জানা।
দুদিন আগে দুদক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ভয়ঙ্কর দুর্নীতি। প্রশ্ন ফাঁস করে শিক্ষার্থীদের দুর্নীতির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’। বিষয়টি আসলে তাই, প্রশ্ন পাওয়া ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার আগেই দুর্নীতির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যায়। যে শিক্ষার্থী পড়াশোনা অবস্থায় দুর্নীতির পথে পা বাড়িয়েছে সে কর্মজীবনে দুর্নীতির পথে হাঁটতে দক্ষতার পরিচয় দিবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই এখন ভয়ংকর এ দুর্নীতি থেকে বের হয়ে আসাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। প্রশ্ন হলো, সে কার্যকর পদক্ষেপ কি আমরা নিচ্ছি? শিক্ষামন্ত্রী যখন বলেন, ‘শিক্ষকেরা এমনটা করলে মুখ থাকে কোথায়? তারা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। দয়া করে মান-ইজ্জত থাকতে স্বেচ্ছায় এই পথ ছেড়ে দিন। না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বোঝাই যাচ্ছে পদক্ষেপ হিসেবে এমন হুঙ্কার, আশ্বাস, ভবিষ্যদ্বাণী কিছুই যে এখন কাজে আসছে না।
এজন্য ভিন্ন পন্থায় আগালেই বরং সবার জন্য মঙ্গল। সে জন্য একটি সমাধান হতে পারে স্থানীয়ভাবে প্রশ্ন ছাপানো এবং এ নিয়ে দেশের শিক্ষাবিদদের নানান পরামর্শ রয়েছে। এবার সে পথে হাঁটাই উত্তম। সেটি কিভাবে হতে পারে তা নিয়ে দেশের শিক্ষাবিদ এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ প্রশ্নপত্র ফাঁস আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় ঝাঁকুনি দিচ্ছে। নাগরিক হিসেবে আমরা চাই, আর একটি পরীক্ষায়ও যেন কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেন বঞ্চিত ও বিভ্রান্ত না হয়।
লেখক: আইনজীবী ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান