অনু কলামের বহর বিস্তৃতি
ড. সা’দত হুসাইন
অনু কলামের উদ্ভাবক হিসাবে আমি নাঈমুল ইসলাম খানকে দেখতে পেয়েছি। তিনি আমাদের বললেন, হঠাৎ মনে আসা চিন্তা ভাবনাকে একটু সাজিয়ে নিয়ে, সম্ভব হলে গদ্য-কাব্যের ছোঁয়া দিয়ে ক্ষুদ্রাকারে প্রকাশ করলে অনু কলামের নান্দনিক রূপ ফুটে উঠে। পাঠক চোখ বুলিয়ে কলামের মূলবার্তা গ্রহণ করে। ভালো লাগলে আত্মস্থ করে। দু’একজনের সঙ্গে আলোচনা করে। বেশি ভালো লাগলে এই বার্তাকে সম্প্রসারিত করে নতুন সংলেখ আকারে প্রকাশিত হতে পারে। কয়েক মিনিটে লেখাটি পড়ে শেষ করতে পারায় পাঠকের আগ্রহে ভাটা পড়ে না।
মজা হচ্ছে, অনু কলাম লিখতে জড়তা থাকে না, আলসেমী ধরে না। সহজে সাহস করে লিখতে বসা যায়। নিয়মিত কলাম লিখতে হলে বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে ভিতরের মাংসল অংশের আকার-সাকার নিয়ে অনেক চিন্তা ধান্তা করতে হয়। পুরো জিনিসগুলো মনের মধ্যে লুকোচুরি খেলতে থাকে। এই আসে তো এই হারিয়ে যায়। বারবার শঙ্কা জাগে একটা পুরো কলামের আকারে অর্থাৎ কয়েক পৃষ্ঠা কম্পিউটার কম্পোজ করে শেষ অবধি লেখাটা শেষ করতে পারব তো? না মাঝ পথে ভাবনা-চিন্তা হারিয়ে লেখাটা শুকিয়ে মরবে। অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে কোনো কোনো কলামিস্ট শেষ পর্যন্ত ‘গরুর রচনা’ লিখে কলামের সমাপ্তি টানেন।
অনু কলাম লিখতে গেলে এত ভয় জড়তা বা আলসেমী থাকে না। এখানে ভাবনাটাই বড়, লেখার আকার মুখ্য বিষয় নয়। ভাবনাটাকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বসে গেলেই হলো। কাগজ-কলমের রসায়ন এমন যে কাগজের ওপর কলমের চাপ পড়লে অনেক সময় আপনা আপনি লেখা বেরুতে থাকে। যে পরিধিতে লেখব ভেবেছিলাম সে পরিধি ছাপিয়ে কলম আমাকে বাইরে নিয়ে ফেলে। সাহস করে বসতে পারার মাজেজা হচ্ছে এভাবে লিখতে পারা।
একটি ছোট্ট ভাবনা মনে আসায় তা নিয়ে অনু কলাম লিখতে বসে গেলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে লেখাটা শেষ করে অন্য কাজে চলে যাব, এমনটা আশা করছি। লিখতে গিয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং বিশ্লেষণ সহযোগে লেখাটা একটু বাড়িয়ে ফেললাম। তারপর আরও বড়। আরও বাড়ালাম। এতো দেখছি পূর্ণাঙ্গ কলামের রূপ নিচ্ছে। আর একটু এগোলে মনে হলো, এখন তো সহজে একে পূর্ণাঙ্গ কলাম হিসাবে রূপ দেওয়া যায়। তাহলে আমার পাক্ষিক নিয়মিত কলাম লেখার ঝামেলা চুকে যায়। আমি পনের দিনের জন্য চিন্তা-মুক্ত হতে পারি। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। বহরে বড় হয়ে অনু কলাম নিয়মিত কলামে রূপান্তরিত হলো। আমি সযতেœ সংরক্ষণ করে একে নিয়মিত কলামের সম্পাদকের নিকট পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিলাম।
নাঈমুল ইসলাম খানের অনু-কলাম এভাবে আমাকে নিয়মিত কলাম লেখার ব্যাপারে সাহায্য করল। মনে সাহস আছে, নাঈমুল ইসলাম খানের কাগজের জন্য অচিরেই আবার একটি অনুকলাম লিখে ফেলতে পারব।
লেখক: সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান